সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা চলছে: জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার একাধিক নতুন পদক্ষেপ ও বিদ্যমান কিছু ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’কে বলেন, সরকার সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং সেটির সাশ্রয়ী মূল্য বজায় রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থাকে খরচ সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তার মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতাভিত্তিক পেমেন্টের ধারাসমূহ বাতিল করতে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনা করেছে।

এমন ধারা অনুযায়ী আগে সরকারকে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের বিদ্যুৎসরবরাহের পরিমাণ নয়, বরং তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে পেমেন্ট করতে হতো।

উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ‘কুইক এনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড এনার্জি সাপ্লাই (স্পেশাল প্রোভিশন) অ্যাক্ট, ২০১০’ বা কুইক রেন্টাল আইন বাতিল করেছে।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমানোর পাশাপাশি এই খাতে খরচও কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। এখন আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করছি, তারা কীভাবে কম ট্যারিফ দিতে পারে। কারণ তাদের ট্যারিফ রেটে বড় ফারাক রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কারণ আগের সরকার গ্যাস আমদানিতে জোর দিয়েছে। তবে বর্তমান সরকার দেশের নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্ব দিয়েছে এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)’কে সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে।

জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করেছে, যা বছরে এক হাজার একশ’ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হবে।

বর্তমান সরকার আইপিপি ও যৌথ উদ্যোগ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ভিত্তিক পেমেন্ট পর্যালোচনার জন্য দুটি কমিটি গঠন করেছে।

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, এনডব্লিউপিজিসিএল, এপিএসসিএল, ইজিসিবি, আরপিসিএল, ও ব্রিপিএলসহ সরকারি মালিকানাধীন ২৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে তাদের চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে, যেখানে চাহিদা আনুমানিক ১৮ হাজার মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এই উদ্যোগের লক্ষ্য সরকারিভাবে বছরে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় এবং এসব সংস্কারের ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট সাশ্রয়ের পরিমাণ হবে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম সরকারের খরচ কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আইপিপি ও যৌথ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে চুক্তি পুনঃপর্যালোচনায় সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

এ বছরের মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে স্থানীয় কূপ থেকে অতিরিক্ত ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আহরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে মহানগর এলাকায় বিতরণ লাইন এবং সাবস্টেশনগুলো ভূগর্ভস্থ করার কাজ চলছে, যা বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে আরও স্থিতিশীল ও কার্যকর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিপিডিসি কর্মকর্তারা জানান, আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর নেপালের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য ৪০ মেগাওয়াট সাশ্রয়ী মূল্যের জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।

সরকার আশা করছে, ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু করবে।

সূত্র: বাসস

কেএন/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে বিএনপি ও ইসলামি দল, রাজনীতিতে নতুন পালাবদল Aug 09, 2025
img
যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের প্রমাণ দিন, চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানের Aug 09, 2025
img
তুষারের গোপন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি নীলা ইস্রাফিলের Aug 09, 2025
img
দেড় মাস পর বড়পুকুরিয়া থেকে আবারও কয়লা উত্তোলন শুরু Aug 09, 2025
img
চার বিভাগে ভারি বৃষ্টির আভাস Aug 09, 2025
img
নিবন্ধন শুরু হয়েছে টাইফয়েড টিকার, প্রথম ধাপেই পাবে ৫ কোটি Aug 09, 2025
img
রাশিয়ায় ফের ভূমিকম্প, রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রা Aug 09, 2025
img
ভারতকে ৭৩ রানে অলআউট করে অস্ট্রেলিয়ার জয় Aug 09, 2025
img
ইঞ্জিনে সমস্যা, সিঙ্গাপুরে আটকে গেল বিজি-৫৮৫ Aug 09, 2025
img
জবি শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণে মামলায় চারজন গ্রেপ্তার Aug 09, 2025
img
সৎ বাবা-মা নিয়ে আয়াশের ধারণা নেই, মন্তব্যে অপূর্বর সাবেক স্ত্রী Aug 09, 2025
img
ওয়াশিংটন ডিসি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শহরগুলোর একটি: ট্রাম্প Aug 09, 2025
ছাত্রশিবিরের টিম কি জানালেন ফারহাদ Aug 09, 2025
নির্বাচনের জন্য সবার সাথে বসতে চায় জাতীয় পার্টি! Aug 09, 2025
'হালার পো হালারা' সংস্কার করছে, বাস্তবায়ন করবে কে? Aug 09, 2025
চীনে প্রবল বর্ষণে বন্যা ও ভূমিধস, নিহত ১৭ Aug 09, 2025
img
প্রবাস জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ তারেক রহমানের Aug 09, 2025
গাজা দখলে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র নিন্দা Aug 09, 2025
ট্রাম্পের সামনে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের শান্তি চুক্তি সই Aug 09, 2025
শতকোটি টাকা নিয়ে উধা'ও ফ্লাইট এক্সপার্ট; ভুক্তভোগীর আর্তনাদ Aug 09, 2025