সম্প্রতি ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড নামের একটি ওয়েবসাইটে বিশ্বের প্রলয়ংকারী ৩৫টি মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। যে তালিকার ২৬টি ঘূর্ণিঝড়েরই উৎপত্তি হয়েছে বঙ্গোপসাগর থেকে। তবে ভয়ঙ্কর এসব ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির পেছনে বঙ্গোপসাগরের প্রাকৃতিক বৈশিষ্টকেই দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ সুনিল অমৃত বঙ্গোপসাগরের প্রকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, বঙ্গোপসাগর এমন এক বিস্তীর্ণ জলরাশি, যা জানুয়ারিতে একেবারে শান্ত ও নীল এবং গ্রীষ্মের বৃষ্টিতে বঙ্গোপসাগরের জল একেবারে ঘোলা ও ফুলে ফেঁপে উঠা।
সুনিল অমৃত জানিয়েছেন, বিশ্বের ইতিহাসে যতগুলো ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হেনেছে, তার বেশির ভাগই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট। অতিতের এসব ঘূর্ণিঝড়ে জীবন-জীবিকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারণ বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অন্তত ৫০ কোটি মানুষের বসবাস।
এদিকে বুধবার বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রথম সুপার ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও বাংলাদেশের উপকূলে বুধবার বিকাল নাগাদ আঘাত হানবে। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় জেলাগুলোতে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়াবিদদের বরাত দিয়ে বিবিসি আরও জানিয়েছে, গ্রীষ্মে বঙ্গোপসাগরের জলরাশি উষ্ণ থাকে। আর এ কারণেই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। তবে বিগত ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ‘আম্পান’ বহুগুন বেশি শক্তিশালী। আম্পানের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভয়াবহ জলোচ্ছাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ডের লেখক বব হেনসন বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের জলরাশি খুব উষ্ণ। এছাড়া গভীর সমুদ্রের জলরাশি ফুলে উঠে। এ কারণে বায়ুপ্রবাহের তারতমের কারণে সহজেই নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। আর এসব নিম্নচাপই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেই।
বব হেনসেন আরও বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের আরও কিছু বৈশিষ্ট আছে, যেগুলোর কারণে ঘূর্ণিঝড় বেশি সৃষ্টি হয় এই জলরাশি থেকে। আর তা হল- এই উপসাগরের উপরিতল ও সারফেসের তাপমাত্রা। জলরাশির উপরিভাগের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড়গুলোকে মারাত্মক করে তোলে। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের উত্তর উপকূল এ ধরনের সার্জ বা জলোচ্ছ্বাসের সবচাইতে বেশি ঝুঁকিতে আছে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সুপার সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বহু ধরণের বিপদ নিয়ে হাজির হয়। সুপার ঘূর্ণিঝড়গুলো প্রথমত প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া তৈরি করে। এসব ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত ঝড়ের সঙ্গে সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ধেঁয়ে আসে। যা আরও ভয়ঙ্কর।
আবহাওয়া ইতিহাসবিদ সুনিল অমৃত বলছেন, ১৯৭০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের ভোলায় যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল, সেটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। এছাড়া ওই ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রায় ১০.৪ মিটার বা ৩৪ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে সম্প্রতি যেসব ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হচ্ছে, তা অতিতের ঘূর্ণিজড়ের চেয়েও শক্তিশালী।
টাইমস/এসএন