ময়মনসিংহের জয়নুল উদ্যান

উদ্যান নামটি শুনলেই মনে আসে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের কথা। তবে বর্তমানে এমন উদ্যান পাওয়া দুস্কর। তবুও মানবসৃষ্ট অনেক উদ্যান বা পার্ক প্রভৃতি গড়ে উঠেছে পৃথিবীতে। যা পৃথিবীর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলছে বহুগুনে।

ময়মনসিংহ জেলা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন জেলা। এই জেলায় রয়েছে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা। রয়েছে দেখার মতো প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট অনেক স্থাপনা। তেমনি একটি স্থাপনা ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান।

উদ্যানটির অবস্থান ময়মনসিংহ জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের কূল ঘেঁষে শহরের কাঁচিঝুলিতে। এই উদ্যানের পুরোনো নাম সাহেব কোয়ার্টার পার্ক। পার্কটির পাশেই রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা। আর সেজন্যই বর্তমানে পার্কটির নাম দেওয়া হয়েছে জয়নুল উদ্যান।

ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় ঘেঁষে লম্বালম্বিভাবে শহরের কাচারি ঘাট থেকে জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা পর্যন্ত উদ্যানটির বিস্তার। পুরো উদ্যানটির ভেতরে গাছের ফাঁকে ফাঁকে টাইলস দিয়ে বাধাই করা বসার বেঞ্চ। উদ্যানের পাশেই সার্কিট হাউস মাঠ ও জেলা প্রশাসন ভবন। পার্কের ভেতরে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা ও পাঠাগার। বিশেষ দিনগুলিতে নাগরদোলা বসানো হয়। উদ্যানের ভিতরে কয়েকটি ভালো মানের রেস্টুরেস্ট গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে ’ব্রহ্মপুত্র ভ্যালি ফুড গার্ডেন’, ‘সারিন্দা’ ও ‘হিমু আড্ডা’ উল্লেখযোগ্য।

উদ্যানের পাশে নদের চরে গিয়ে কাশফুলের সঙ্গে পোঁজ দিয়ে ছবি তোলে কেউ কেউ। নদের ওপারে চরের মধ্যে ধানক্ষেত, কাশফুল, লেবু বাগান, সবজিক্ষেত, মন্দির ও মাঝিদের বাড়ি। নদ পার হয়ে চরে যেতে প্রতিজনে ১০ টাকা করে দিতে হয় নৌকায়। উদ্যানের ভিতরে রয়েছে ছোট ছোট তাঁবুর তৈরি দোকান।

প্রতিদিনই এখানে ভিড় জমায় অগণিত দর্শনার্থী। উদ্যানের সবুজ প্রকৃতি ও পাশের ব্রহ্মপুত্র নদের নয়নাবিরাম দৃশ্য যে কাউকে পাগল করবে। উদ্যানটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

তবে সন্ধ্যার পর উদ্যানে না থাকাই ভালো। মাঝে মাঝেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে।

কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে আসতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামীম এন্টারপ্রাইজ, সৌখিনসহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সময় লাগবে আড়াই থেকে চার ঘন্টা । এছাড়াও কমলাপুর, বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-নেত্রকোণা রুটের গাড়িতেও ময়মনসিংহে যেতে পারবেন। এনা ট্রান্সর্পোটে ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। তাছাড়া সৌখিন পরিবহনের ভাড়া ১৫০ টাকা। মাসাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে অথবা শহরের ব্রীজ মোড়ে নেমে অটো বা রিক্সায় করে সহজেই পৌছে যাবেন উদ্যানটিতে।

এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে করেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল সাতটা বিশ), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর দুইটা বিশ), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল চারটা চল্লিশ), অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ছয়টা) ও হাওর এক্সপ্রেস (রাত এগারোটা পনেরো) ময়মনসিংহেরে উদ্দেশ্যে ছাড়ে।  ভাড়া শ্রেণীভেদে ১০০ থেকে ৩৬০ টাকা। রেল স্টেশন থেকে অটো বা রিক্সায় যেতে পারবেন উদ্যানে।

কোথায় থাকবেন: থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- আমির ইন্টান্যাশনাল (০১৭১১১৬৭ ৯৪৮), হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশলনাল (০১৭১৫১৩৩ ৫০৭),  হোটেল হেরা (০১৭১১১৬৭ ৮৮০), হোটেল সিলভার ক্যাসল (০৯১৬৬১৫০, ০১৭১০৮৫৭ ০৫৪), হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল (০৯১৬৫৯৯৫) প্রভৃতি।

খাওয়া দাওয়া: শহরের কেন্দ্রস্থল প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এছাড়া হোটেল সারিন্দা ও হোটেল ধানসিঁড়িও ভালো। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে মাঝারি ও নিম্নমানের বেশ কিছু খাবার হোটেল।

 

Share this news on: