সৌন্দর্যের আরেক নাম সুন্দরবনের কটকা সৈকত

সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। এই দেশের চারদিকে রয়েছে সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি। মাঠের পর মাঠ, এঁকে-বেঁকে চলা অসংখ্য নদ-নদী, চারিদিকে ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজির সমাহার রয়েছে এখানে। এই অপরূপ দৃশ্য দেখলে মন ভরে যায়। আমাদের দেশের অন্যতম সুন্দর একটি স্থান সুন্দরবন। এই সুন্দরবনকে ঘিরে রয়েছে অজস্র আকর্ষণীয় স্থান। তার মধ্যে অন্যতম একটি হল কটকা সমুদ্র সৈকত।

সুন্দরবনের দক্ষিণ পূর্ব কোণে খুলনা ও বাগেরহাটে অবস্থিত কটকা সমুদ্র সৈকত। এটি মংলাবন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যের মধ্যে প্রধান কেন্দ্র।

সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। কিন্তু বনে বাঘের দেখা মেলা যেমন ভার, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তবে বাঘের দেখা পাওয়া ও নিরাপদে থাকা দুই-ই সম্ভব সুন্দরবনের চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র কটকা অভয়ারণ্য থেকে। এখানে প্রায়ই দেখা মেলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। এছাড়া মনোরম চিত্রা হরিণের দল, বিভিন্ন জাতের পাখি, শান্ত প্রকৃতি এবং বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উপস্থিতি এসবই এ স্থানটিকে অসাধারণ সৌন্দর্য দিয়ে ভরে দিয়েছে।

বন কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর পাশের খালটির ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল দেখা যায়। এছাড়া একটু শান্ত থাকলে বা নিরিবিলি যেতে পারলে এখানে দেখা মিলতে পারে চিত্রা হরিণেরও। ট্রেইলের শেষ মাথায় হাতের ডানে সোজা দক্ষিণে মিনিট হাঁটলে পাবেন টাইগার টিলা। এ টিলায় প্রায়ই বাঘের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় বলেই টিলাটির এমনতর নামকরণ। টাইগার টিলা থেকে সামান্য পশ্চিমে বয়ার খাল। দুইপাশে কেওড়া, গোলপাতা আর নানান পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে জায়গাটি।

এছাড়া কটকার জেটির উত্তরে খালের চরজুড়ে থাকা কেওড়ার বনেও দেখা মেলে দলবদ্ধ চিত্রা হরিণ, বানর আর শূকরের। আবার শীতের সময় দেখা মিলে যেতে পারে রোদ পোহানো লোনা জলের কুমির। কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে একটি ছোট খাড়ি চলে গেছে সোজা পূর্ব দিকে। এই পথে কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে ছোট্ট জেটি এবং ওপরে ওয়াচ টাওয়ার। কটকার ওয়াচ টাওয়ারটি চারতলা বিশিষ্ট। ৪০ ফুট উচ্চ টাওয়ার থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। ওয়াচ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে বীচের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পূর্বে দীর্ঘ বন আর মাঝে মিঠা জলের পুকুর। এই পুকুরের পানি পান করেন কর্মরত কোস্ট গার্ড, ফরেস্ট অফিসার ও স্থানীয় জেলেরা। এখান থেকে আশেপাশে তাকালে দেখা মিলে সুন্দরবনের প্রায় বিপন্ন প্রাণীদের। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ার থেকে খানিকটা সামনে এগোলে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি খালের মাঝেও দেখতে পাবেন বিপুল সংখ্যক বন্যপ্রাণী।

কিভাবে যাবেন:

কটকায় যাবার প্রধান ও একমাত্র মাধ্যম হলো লঞ্চ। আর পর্যটকদের নিয়ে এই লঞ্চ নোঙ্গর করা হয় কটকা খালে। রাজধানী ঢাকার গাবতলি ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রথমে খুলনা বা বাগেরহাট গামী বাসে করে খুলনা আসতে হবে আপনাকে। ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা পরিবহন, শাকুরা পরিবহন, পর্যটক পরিবহন, সোহাগ পরিবহন।

খুলনা থেকে রূপসা বা বাগেরহাটের মংলা বন্দর থেকে লঞ্চ পাবেন সুন্দরবন যাওয়ার। এছাড়া বাগেরহাটের মংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকেও সুন্দরবন যাওয়ার নৌযান পাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন:

টুরিস্ট ভেসেল বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্ট হাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যার ফি নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, চার কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, চার কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ ২ হাজার টাকা, দুই কক্ষ ৪ হাজার টাকা।

এছাড়া সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্ট হাউজ ও ডরমিটরিতে একক, পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে।

এছাড়াও মংলায় থাকতে চাইলে আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরেও আছে সাধারণ মানের হোটেল। খুলনা মহানগরে আছে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন, হোটেল সিটি ইন ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ও কিছু সাধারণ মানের হোটেল।

খরচ:

কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় প্রত্যেক দেশী পর্যটকের প্রতিদিনের ভ্রমণ ফি- ১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী ৩০ টাকা, বিদেশী পর্যটক ১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশী পর্যটক ৭০ টাকা ও বিদেশী পর্যটক ১০০০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী ২০ টাকা, গবেষক ৪০ টাকা। করমজলে দেশী পর্যটক ২০ টাকা, বিদেশী পর্যটক ৩০০ টাকা।

হেলিকপ্টার/সী প্লেন এককালীন ৩০ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ১০ হাজার টাকা। ১০০ ফুটের ঊর্ধ্বে¦ লঞ্চ ১৫ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ৪ হাজার টাকা, লঞ্চ ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট এককালীন ১০ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ৩ হাজার টাকা। ৫০ ফুটের নিচে সাড়ে সাত হাজার টাকা ও নবায়ন ফি আড়াই হাজার টাকা, ট্রলার ৩ হাজার টাকা ও নবায়ন ১৫০০ টাকা। স্পিড বোট ৫ হাজার টাকা ও ২ হাজার টাকা। জালিবোট (টুরিস্ট বোট) ২ হাজার টাকা ও ১ হাজার টাকা।

বন বিভাগের নির্দিষ্ট ভ্রমণ ফি ছাড়াও প্রতিদিন গাইড ফি ৫০০ টাকা, লঞ্চ ক্রু ফি ৭০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন থাকলে ‘জামায়াত’ অস্বস্তি বোধ করবে

আমি আর বিষয়টি জটিল করতে চাই না,মন্তব্য রাষ্ট্রপতির Dec 31, 2025
img
জানুয়ারির ১ তারিখকেই কেন বছরের প্রথম দিন ধরা হয়? Dec 31, 2025
img
ঢাকা ত্যাগ করেছেন এস জয়শঙ্কর Dec 31, 2025
img
‘মৃত্যুর আগপর্যন্ত ভালোবেসে যাব’ বিচ্ছেদের পর সংগীতশিল্পী সালমা Dec 31, 2025
img
ভারতের এক কূটনীতিকের সঙ্গে গোপনে বৈঠক হয় ডা. শফিকুর রহমানের Dec 31, 2025
img
‘ক্ষমতার বাইরে থেকেও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার প্রমাণ এই জনসমুদ্র’ Dec 31, 2025
img
হাসপাতালে ভর্তি ব্রাজিলের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার Dec 31, 2025
img
রুমিন ফারহানার নামে ধানমন্ডিতে ৫ ফ্ল্যাট ও ৫ কাঠা জমি, হাতে নগদ ৩২ লাখ টাকা Dec 31, 2025
img
গম্ভীরকে নিয়ে মুখ খুলল বিসিসিআই Dec 31, 2025
img
দ্বিতীয় সংসার ভেঙে যাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন সালমা Dec 31, 2025
img
তারেক-শফিকুর-নাহিদের চেয়ে আয় বেশি নুরের Dec 31, 2025
img
২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পেতে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন Dec 31, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের স্পিকারের সাক্ষাৎ Dec 31, 2025
বেগম জিয়াকে নিয়ে স্মৃতিচারণে লাখো জনতার ভালোবাসায় বিদায়ী সমাবেশ Dec 31, 2025
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েত Dec 31, 2025
হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে করালেন অভিনেতা আরশ খান Dec 31, 2025
img
রাহার জন্য বড় সিদ্ধান্ত, বলিউড থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন আলিয়া ভাট Dec 31, 2025
img
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর নেই Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে স্বর্ণের দামের সুখবর দিল বাজুস Dec 31, 2025
img
একযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৭ কমিশনারকে বদলি Dec 31, 2025