যেভাবে বিখ্যাত বিজ্ঞানী হয়েছিলেন আইনস্টাইন

বিশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের একজন আলবার্ট আইনস্টাইন। তার আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব পদার্থ বিজ্ঞানে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছিল। তার দেয়া ভর ও শক্তির সূত্র (E = mc2) বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সূত্রদের একটি।

তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ১৯২১ সালে তিনি পদার্থে নোবেল পুরস্কার পান।

মানবিক এবং বৈশ্বিক বিষয়ে মুক্ত চিন্তা ও স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন।

১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির একটি ইহুদি শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আইনস্টাইন। ১৫ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সাথে ইতালির মিলানে চলে যান।

বাবার ইচ্ছে ছিল আইনস্টাইন একজন ইঞ্জিনিয়ার হবেন। শৈশবে পড়ালেখায় প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। তবে পরীক্ষায় তার ফলাফল উল্লেখ করার মতো ছিল না। শিক্ষকদের মতে, শিখার ক্ষেত্রে আইনস্টাইন খুব ধীর প্রকৃতির ছিলেন। তাই তার শিক্ষকরা তার প্রতি অনেক সময় বিরক্ত হতেন।

আইনস্টাইন বলেন, ‘স্কুল আমার কাছে ব্যর্থ, আর আমি স্কুলের কাছে ব্যর্থ। কারণ যে বিষয়ে আমার আগ্রহ থাকে আমি তা শিখতে চাইতাম, অথচ আমার শিক্ষকরা পরীক্ষায় পাস করার জন্য যা দরকার কেবল তাই শিখাতেন’।

লেখাপড়ার ব্যাপারে আইনস্টাইন অত্যন্ত স্বাধীন ছিলেন। শিক্ষকদের ধারণা তার এই উদাসীনতা অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে একবার তাকে স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেছিল কর্তৃপক্ষ।

যখন হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় চলে আসলেন তখন তিনি পরিবারের সাথে সুইজারল্যান্ড চলে যান। সেখানে জুরিখের ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনলোজির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা এবং ভাষাশিক্ষা বিষয়ে তিনি অকৃতকার্য হলে সেবার ভর্তি হতে পারেননি।

পরের বছর ১৯০০ সালে তিনি আবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯০১ সালে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব লাভ করেন।

১৮৯৬ সালে বাধ্যতামূলকভাবে জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগদান এড়াতে তিনি জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। সুইজারল্যান্ডের নাগরিক হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর তিনি রাষ্ট্রবিহীন ছিলেন।

জুরিখ কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউ সেদিন তাকে শিক্ষতার চাকরি দেয়নি। অবশেষে তিনি সুইস পেটেন্ট অফিসে চাকরি পান।

এখানে থাকা অবস্থায় তিনি তার বৈজ্ঞানিক গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যান।

১৯০৫ সালে তিনি ‘অ্যা নিউ ডিটারমিনেশন অফ মলিকুলার ডাইমেনশন’ এর উপর পিএইচডি করেন। একই বছর তিনি চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যা পদার্থ বিজ্ঞানে নতুন বিপ্লব নিয়ে আসে।

তার গবেষণাকাজ এতই প্রশংসিত হয় যে ১৯০৯ সালে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পান। এমন কি ১৯১১ সালে প্রেগের চার্লস ফার্দিনান্দ বিশ্ববিদ্যালয় আইনস্টাইনকে একজন পূর্ণ অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয় প্রেগের চার্লস ফার্দিনান্দ বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯১৪ সালে তিনি আবার জার্মানিতে ফিরে আসেন এবং কাইজার উইলহ্যাম ইনস্টিটিউট ফর ফিজিক্স এর পরিচালক নিযুক্ত হন।

আইনস্টাইন প্রমাণ করেন যে, আলো কেবল তরঙ্গ আকারেই নয় বৈদ্যুতিক তরঙ্গ হিসেবেও গমন করে। তিনি আলোর কণার নাম দেন কোয়ান্টাম। তার এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীরা টেলিভিশন এবং মুভি আবিষ্কার করতে সমর্থ।

আলোর এই কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যাখ্যা করার জনা আইনস্টাইনকে ১৯২১ সালে পদার্থে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

জার্মান ইহুদি হিসাবে হিটলারের নাৎসি পার্টির হুমকির মুখে পড়েন আইনস্টাইন। ১৯৩৩ সালে নাৎসি পার্টির সদস্যরা তার সম্পত্তি জব্দ করে এবং তার বইপত্র পুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে আইনস্টাইন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

তবে আইনস্টাইন নিজেকে জাতি, ধর্মের উর্ধ্বে একজন বিশ্ব নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। কোনো বিশেষ ধর্ম অনুসরণ না করলেও তিনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতেন। তিনি বলেছেন, ‘ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু, বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ’।

আইনস্টাইন নিজেকে একজন সমাজতান্ত্রিক বলে বর্ণনা করেছেন। সমাজতন্ত্রের সমর্থনে তিনি ‘হোয়াই সোসালিজম?’ শীর্ষক গ্রন্থ লিখেছেন।

তিনি ইসরাইলের রাষ্ট্রকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু ইসরাইল রাষ্ট্রের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

১৯৫২ সালে তাকে ইসরাইলের রাষ্ট্রপতি পদের সম্মান দিলেও তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালে বর্ণবাদবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি পরমাণু বোমার উন্নয়নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের ম্যানহাটন প্রজেক্টে ভূমিকা রাখেন।

তবে যুদ্ধ শেষ হলে তিনি পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নের চরম বিরোধিতা করেছিলেন।

বিজ্ঞানী হলেও আইনস্টাইন খুব ভাল গান করতেন। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানী না হলে আমি একজন গায়ক হতাম’। ১৯৫৫ সালে এই মহান বিজ্ঞানী মারা যান।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সেলটার কাছে হেরে বড় ধাক্কা খেল রিয়াল Dec 08, 2025
img
স্মৃতি মান্ধানা সাফ জানলেন বিয়ে বাতিল Dec 08, 2025
img
জকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপটেস্ট শুরু ৯ ডিসেম্বর Dec 08, 2025
img
অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরের জন্য কেন ক্ষতিকর? Dec 08, 2025
img
শীতে কম্বলে নাক-মুখ ঢেকে ঘুমালে কী ক্ষতি Dec 08, 2025
img
ভিন্নধর্মের কাউকে বিয়ে করলেই সমস্যা কেন, সমালোচনায় ক্ষুব্ধ সোনাক্ষী Dec 08, 2025
img
রোনালদোর একাধিক রেকর্ড কেড়ে নিতে যাচ্ছেন এমবাপ্পে Dec 08, 2025
img
ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের কাছে দোয়া চাইলেন তাসকিন Dec 08, 2025
img
সরকারি পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না কেউ : ইসি Dec 08, 2025
img
এক অপ্রীতিকর ঘটনায় বদলে যায় আয়শা ঝুলকার ক্যারিয়ার! Dec 08, 2025
img
আজ পিরোজপুর হানাদারমুক্তর দিন Dec 08, 2025
img
বলিউড সিনেমায় অক্ষয়-সাইফের সঙ্গে যিশু Dec 08, 2025
img
মেহেদিরাঙা হাতের ছবির রহস্য দূর করলেন কনা! Dec 08, 2025
img
কীভাবে ফুসফুসের ক্যানসার জয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত? Dec 08, 2025
img

বিএনপিতে যোগ দিয়ে বললেন আ.লীগের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান

‘আওয়ামী লীগ গেছেগা পলাইয়া, আমি কি করুম?’ Dec 08, 2025
img
রাতভর শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থানের ঘোষণা সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের Dec 08, 2025
img
ভারি বৃষ্টির আশঙ্কায় সোমবার মদিনার সব স্কুলে সশরীরে ক্লাস বন্ধ Dec 08, 2025
img
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক আফসানা মিমি Dec 08, 2025
img
রাজবাড়ী জেলার ৫ থানায় নতুন ওসির যোগদান Dec 08, 2025
img
চিড়িয়াখানা বন্ধ হোক: আরশ খান Dec 08, 2025