জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে, এটা খাজুরে আলাপ ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
রনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কাঁধে ভর করে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে চায় বা ভারত জাতীয় পার্টিকে চাঙ্গা করে জিএম কাদেরের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করতে চায় এবং শেখ হাসিনা আগামীতে জাতীয় পার্টির ওপর ভর করে বাংলাদেশে আসবেন। এসব কথাকে উপলক্ষ করে আমাদের মতো যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর রয়েছেন, তারা বলার চেষ্টা করছেন যে জাপার কাঁধে আপা বা আপা কেন জাপাতে।
এ ধরনের কথাবার্তা রাজনীতির ক্ষেত্রে অপরিপক্বতার ফল। এটা যে কতটা একটা অসম্ভব বিষয়, এটা কেবল যারা রাজনীতি করেন, তারা বুঝতে পারবেন।’
‘কাজেই এখন এই জাপাকে নিয়ে যে সব কথাবার্তা হচ্ছে, এটা খাজুরে আলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। জাতীয় পার্টি সবসময় একটা বি টিম হিসেবে কাজ করেছে।
মানে যাকে বলা হয় ব্যবহৃত হওয়া। সেই ৯১ থেকে এ পর্যন্ত, এরশাদ জীবনে দুইবার তিনি ঘাড় উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমবার হলো, যখন জেলখানাতে তিনি ছিলেন এবং সমর্থনের ব্যাপার আসল যে জাতীয় পার্টি বিএনপিকে সমর্থন দেবে নাকি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবে। তখন তিনি একবার জীবনে দাঁড়িয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, আমি মরে যাব কিন্তু কোনো অবস্থাতে বিএনপিকে সাপোর্ট দেব না। ফলে আওয়ামী লীগে সাপোর্ট দেওয়ার কারণে তিনি জেলখানাতে অনেক চাপের মধ্যে ছিলেন।
‘সেই প্রথমবার তিনি ১৯৯৬ নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট দিয়েছিলেন। এরপর ২০০৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ম্যানেজ করার জন্য তারেক রহমান সাহেব এবং তার যারা সঙ্গী সাথী সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন। ওই সময়টাতে তারেক রহমান সাহেব জেনারেল এরশাদ সাহেবের বাসায় গিয়েছিলেন।
সে সময় জাতীয় পার্টিকে নির্দিষ্ট সংখ্যক সিট দেওয়া হবে এবং প্রতিটি সিটে ইলেকশন করার জন্য তাদেরকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। তো এরশাদ নিমরাজি এবং তিনি যদি রাজি হয়ে যেতেন তাহলে কিন্তু ওয়ান ইলেভেন আসতো না। বিএনপির বিটিএম হিসেবে জাতীয় পার্টি আসতো, এরশাদ রাষ্ট্রপতি হতো বা পরবর্তী অন্য একটা ইতিহাস তৈরি হতো। কিন্তু ওইবার এরশাদ সাহেব রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এটা তার জীবনের দ্বিতীয়বার রুখে দাঁড়ানো।’
তিনি বলেন, ‘এর বাইরে সারাটা জীবন তিনি এবং তার দল নেগোসিয়েশন করেছেন। ৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছোট করতে করতে ধরেন, জাতীয় পার্টি একটা বিরাট বটবৃক্ষ ছিল, সেটাকে ১ ফুট উচ্চতার একটা বনসাই বটবৃক্ষ বানিয়ে ফেলা হয়েছিল ২০২৫ সানে। তো কাজেই সেই জাতীয় পার্টির ওপর আওয়ামী লীগের মত একটা বড় দল ভর করবে; এটা কোনো ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, ম্যাথমেটিক্স এর মধ্যে পড়ে না।’
‘আর শেখ হাসিনাকে আমি যতটা চিনি জানি এবং অন্যান্য যারা চিনে জানেন, কোনো অবস্থাতেই তিনি যাদেরকে একবার ছোট মনে করেন, তাদের সঙ্গে আর ঐক্যবদ্ধ হবেন না, তাদেরকে কাছে টেনে নেবেন না। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়ে দেখেন, তার বড় মেয়েটি কি ধরনের জেদি ছিল। আর গত ৫ আগস্টেও তিনি কিন্তু মুষ্টিবদ্ধ হাত নিয়ে চলে গেলেন দৃঢ়তার সঙ্গে। আপনি তার অভিব্যক্তিতে দেখেন যে তার মধ্যে কোনো ভয় আতঙ্ক, সংকোচ কোনো কিছু ছিল না।তাই তিনি জাপার ওপর ভর করে ফিরে আসবেন এটা কখনোই সম্ভব নয়।’
পিএ/এসএন