আদালতের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন জাহেদ উর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখনো পুরোপুরি আলাদা হয়নি, যা একটি হতাশাজনক বাস্তবতা। যদিও কিছু অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও কার্যকর স্বাধীনতা এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

সম্প্রতি তার ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব নিয়ে কথা বলেন।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন, তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাজতন্ত্রের সময় রাজার হাতে আইন প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ ও বিচার, তিন ক্ষমতাই কেন্দ্রীভূত ছিল। সেখান থেকে ধাপে ধাপে বিকাশ ঘটে ‘ক্ষমতার বিভাজন’ বা ‘সেপারেশন অব পাওয়ার’-এর ধারণা। গণতন্ত্রের মূল কথাই হলো ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ নয়, বরং বিকেন্দ্রীকরণ।

জাহেদ উর রহমান আরো বলেন, আমাদের সংবিধানের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা আছে, রাষ্ট্রের প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করতে হবে। অথচ একই সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকবে; সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে। কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা মূলত প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই প্রয়োগ হয়, কারণ সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির প্রায় সব সিদ্ধান্তই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী হতে হয়। ফলে অধস্তন আদালতগুলো কার্যত সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থেকে গেছে, যা ২২ নম্বর অনুচ্ছেদের সরাসরি পরিপন্থী। ১৯৯৯ সালে মাজদার হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে দিতে হবে।

কিন্তু এরপর দুই বছর আওয়ামী লীগ ও পাঁচ বছর বিএনপি ক্ষমতায় থেকেও রায়টি কার্যকর করেনি। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কিছু অগ্রগতি হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ পৃথকীকরণ হয়নি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মানে শুধু ফরমাল সেপারেশন নয়, এটি বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য হতে হবে। এর প্রভাব হবে নাগরিক জীবনে।

যেমন- সরকার যদি কোনো নির্দিষ্ট মামলায় জামিন না দিতে চাপ দেয়, আগে বিচারকরা ভয় পেতেন বদলি, পদোন্নতির বিষয়ে। কিন্তু এখন যদি বিচার বিভাগ সত্যিকারের স্বাধীন হয়, তাহলে বিচারকরা নির্ভয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো বাকি, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি। সংবিধানে বলা আছে, এ বিষয়ে একটি আইন করা যেতে পারে। সেই আইনের মাধ্যমে যদি বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়, তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হবে পূর্ণতাপ্রাপ্ত।

এই পটভূমিতে তিনি বলেন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময়ও এই দাবি ছিল। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে আলাদা করতে হবে। জাহেদ উর রহমান বলেন, এই উদ্যোগ সফল হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার জন্য এটি হবে এক বিশাল অগ্রগতি এবং একটি কাঙ্ক্ষিত বিপ্লবের শুরু।

এসএস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ২ Sep 05, 2025
img
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কাতারফেরত আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার Sep 05, 2025
img
আমরা যেন আওয়ামী লীগ না হই: হাফিজ উদ্দিন Sep 05, 2025
img
বাংলাদেশের মাটিতে আমরা একটি নতুন রাজনীতি দেখতে চাই : শামা ওবায়েদ Sep 05, 2025
img
হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে লেবাননে মন্ত্রিসভার বৈঠক Sep 05, 2025
img
যেনতেন উপায়ে কারো চাপিয়ে দেওয়া নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না : ডা. তাহের Sep 05, 2025
img
বাকেরের বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ ছাত্রদল সভাপতির Sep 05, 2025
img
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মূল রূপকার তারেক রহমান : রিজভী Sep 05, 2025
img
সালমানকে ছাড়িয়ে শাকিব অনেক ওপরে চলে গেছে : ঝন্টু Sep 05, 2025
img
প্রকৃত সংস্কারের আগে মানসিক সংস্কার দরকার: গয়েশ্বর চন্দ্র রায় Sep 05, 2025
img
ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ Sep 05, 2025
img
অং সান সু চির বেঁচে থাকা নিয়ে ছেলের সংশয় প্রকাশ Sep 05, 2025
তাহসানের সন্তান, গুঞ্জন সত্যি নাকি শুধুই কল্পনা? Sep 05, 2025
কেন বললেন অপূর্ব, ভালোবাসা বদলে যায় ঘৃণায়? Sep 05, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ কোরিয়ার ৩ শতাধিক নাগরিক আটক Sep 05, 2025
img
ময়মনসিংহে জামায়াতের অমুসলিম শাখার সভা অনুষ্ঠিত Sep 05, 2025
img

গোলাম মাওলা রনি

কাদেরকে দিয়ে ইন্ডিয়া, সালমানকে দিয়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা ছিল হাসিনার Sep 05, 2025
img
গাজা সিটির ৪০ শতাংশ দখলের দাবি ইসরাইলি বাহিনীর Sep 05, 2025
img
জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি ৪০ রাজনৈতিক দলের নেতাদের Sep 05, 2025
img
গণ অধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধ করার দাবি জাপা মহাসচিবের Sep 05, 2025