সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করানো। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই প্রশিক্ষণ কতটা কার্যকর হবে এবং পুলিশ বাহিনীর মনোবল ও সক্ষমতা কতখানি উন্নত করতে পারবে? বর্তমান আইন-শৃঙ্খলার জটিল পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনী অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, সেখানে এই প্রশিক্ষণ সত্যিই নির্বাচনী পরিবেশকে পরিবর্তন করতে পারে কি না—এটাই এখন সবচেয়ে বড় বিষয়।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’- তে তিনি এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ। কারণ সামনে যে নির্বাচন আসছে, সেখানে পুলিশ কি আদৌ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারবে, সেই সক্ষমতা ও মনোবল তাদের আছে কিনা—তা এখন বড় প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর জনসাধারণের আস্থা কমে গেছে।
আজকে দেখলাম কক্সবাজারে একটি খাল দখলমুক্ত করতে গিয়ে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়তে হয়েছে।
ঘেরাও, অবরোধ—এসব ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। অনেক জায়গায় পুলিশ একা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না; সেনাবাহিনী নামাতে হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের চর্চা অনুযায়ী, তারা প্রায়ই ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই অবস্থান নেয়। যে এলাকায় বিএনপির প্রভাব বেশি সেখানে প্রশাসনের এক ধরনের আচরণ দেখা যায়; আর যেখানে আওয়ামী লীগের প্রভাব সেখানে ভিন্ন রকম। ফলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তার ওপর ৫ আগস্টের ঘটনার পর পুলিশের মনোবল মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক, অনেকেই বিচারের মুখোমুখি।
এই বাস্তবতায় নির্বাচন পরিচালনায় পুলিশের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা নিয়ে নানা রাজনৈতিক দল যেমন— জামায়াত, নাগরিক ঐক্য, এমনকি বিএনপিও সংশয় প্রকাশ করেছে।’
মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক কাজী জিয়াউদ্দিন জানিয়েছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে দেড় লাখ (বা তার বেশি) পুলিশ সদস্যকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। উদ্দেশ্য শুধু দক্ষতা বৃদ্ধি নয়, মনোবলও পুনর্গঠনের চেষ্টা।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সহজ নয়। নির্বাচন উপলক্ষে অতিরিক্ত দুই হাজার এএসআই নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা এসেছে কিন্তু মূল সমস্যা তা নয়। পুলিশের পুরো কাঠামো উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যদি পুনর্গঠন না করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে।
কারণ, এখনো যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতেই পুলিশের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, সব মিলিয়ে, সবার মনেই একটাই প্রশ্ন—শেষ পর্যন্ত কি পুলিশ সত্যিই নিরপেক্ষ ও শক্তিশালীভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যে আস্থা দরকার, তা কি জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব? এই প্রশ্নের জবাব এখনো অনিশ্চিত।
এমআর/টিকে