অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘মানব জীবনে কেবল সক্ষমতা নয়, ন্যায়, ন্যায্যতা এবং এমন এক পৃথিবীর আকাঙ্খা থাকে, যেখানে আমরা বাঁচতে চাই। এগুলো আমাদের ভাবতে সাহায্য করে- মানুষের কী চাইবার যৌক্তিক কারণ আছে এবং ন্যায়বিচারপূর্ণ সামাজিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এগুলো কীভাবে পূরণ করা যায়।’
বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত ‘ব্যক্তির জীবনকুশলতা এবং সামাজিক কল্যাণ’ শীর্ষক পাঠচক্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। শনিবার জুম প্ল্যাটফর্মে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ চৌধুরী। অমর্ত্য সেনের কর্মের ওপর ছয় মাসব্যাপী এই পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ‘সক্ষমতা বিষয়ক আলেচনা দুটি ভিন্ন ধরনের চিন্তার ধারা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একটি হলো কেবল আয়, সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে চিন্তিত থাকা। অন্যটি হলো মানসিক সুখ, আনন্দ আর পরিতৃপ্তি খোঁজা। দুটোই প্রাসঙ্গিক। তবে এগুলো ছাড়িয়ে যেতে হবে, যাতে আমরা আরও পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝতে পারি- মানুষ আসলে কী পেতে চায়, আর কী পাওয়ার যথার্থ কারণ তাদের আছে। আমি এখানে একটা পার্থক্য করব- কিছু কিছু বিষয় লক্ষ্য নয়, বরং সূচক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন জাতীয় সুখের কথা ধরা যাক। আমরা চাই দেশ সুখী হোক- এটা এক রকম কথা। অনেকেই শুরু করেন, আমাদের সুখ আছে, কিন্তু তা নানা উপায়ে তৈরি করা সম্ভব।’
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘হয়তো কেবল সুখ নিয়েই ব্যস্ত থাকা ঠিক নয়। বরং যখন সুখ ইঙ্গিত দেয় যে, সবকিছু ভালোভাবে চলছে, তখন আমরা সত্যিই আনন্দিত হওয়ার কারণ খুঁজে পাই। তখন সুখের আরও একটি মাত্রা থাকে। এটি ইঙ্গিত করে যে, আমরা যা অনুসরণ করি, মূল্যবান মনে করি, লালন করতে চাই- সবকিছু ভালোভাবে চলছে।’
তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন কোনো তত্ত্ব হাজির করতে চাই না, বরং শুধু ইঙ্গিত করতে চাই যে, সক্ষমতার সম্ভাবনাগুলো নানা উপায়ে ব্যবহার করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে এগুলো নিজেই মূল্যবান। অন্যদিকে এগুলো আমাদেরকে ভাবতে সাহায্য করে- মানুষের কী চাইবার যৌক্তিক কারণ আছে এবং ন্যায়বিচারপূর্ণ সামাজিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এগুলো কীভাবে পূরণ করা যায়। যখন তা হয়, তখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও বিস্তৃত হয়। অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমার বক্তৃতা দেওয়ার একটি সমস্যা হলো, আমার দেওয়ার মতো আসলে কোনো বক্তৃতা নেই। আমি মূলত শুনতে চাই, কী হচ্ছে চারপাশে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাবিনা আলকায়রে। আরও বক্তব্য দেন এ আয়োজনের অন্যতম স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এমটিবির পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, পাঠচক্রের আহ্বায়ক এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত পট্টনায়ক প্রমুখ।
ইএ/টিকে