জুনিয়রদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাতেন অমিত সাহা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

অমিত সাহা গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী। উঠে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুনিয়রদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাতেন অমিত সাহা। তার মারধরের শিকার হয়েছে বহু ছাত্র।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র অমিত সাহা বুয়েটে ভর্তির পর পর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেতে সন্ত্রাসীদের মতো কর্মকাণ্ড শুরু করেন। নিজেকে আগ্রাসী হিসেবে পরিচিত করেন ক্যাম্পাসে। ফলও পান দ্রুত। স্বল্প সময়ে হয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক। তার উশৃঙ্খলতা ও বর্বর আচরণ সম্পর্কে অনেকেই তথ্য দিয়েছেন। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নাম প্রকাশ করতে চাননি।

১৭ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তাদের ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সিনিয়রদের মধ্যে একজনকে পেছন থেকে সবচেয়ে বেশি গালমন্দ করতেন। তিনি হচ্ছেন অমিত সাহা। তাকে সব সময় আগ্রাসী ও মারমুখী দেখা যেত। তাকে কেউ দেখতে না পারলেও সামনাসামনি কেউ কিছু বলার সাহস পাননি।

আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অমিতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমিত সাহার নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ পায়।

আবরার হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহা যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, সেই অভিযোগ দুই দিন ধরেই করে আসছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, আবরার ফাহাদ হলে আছেন কিনা সে বিষয়ে প্রথম খোঁজ নিয়েছিলেন অমিত। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অমিত আবরারের এক বন্ধুকে ইংরেজি অক্ষরে 'আবরার ফাহাদ হলে আছে কিনা' মেসেজ দেন।

এর এক ঘণ্টা পর ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে লাঠি, চাপাতি ও স্টাম্প এনে তাকে পেটানো শুরু করে ছাত্রলীগের নেতারা।

সূত্র বলছে, ৬ অক্টোবর রাতে অমিত সাহার রুমে প্রথম দফায় মারধরের নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। তার সঙ্গে মারধর শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ও উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল।

পরে যোগ দেন অনিক, জিয়ন, মনির ও মোজাহিদুলসহ অন্যরা। প্রথম দফায় মারধর চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এরপর রাতের খাবার খাওয়ানো হয় আবরারকে। খাওয়ানো হয় ব্যথানাশক ট্যাবলেটও। দেয়া হয় মলম। দ্বিতীয় দফা মারধর শুরুর সময় অনিক ছিলেন সবচেয়ে মারমুখী।

আবরার এ সময় বারবার বমি করছিলেন। একপর্যায়ে তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্নার কক্ষে। সেখানে আবরারের শরীরের ওপর অনিক ক্রিকেট স্টাম্প ভাঙেন। পরে আরেকটি স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। তৃতীয় দফার মারধর শুরু হয় মুন্নার কক্ষে। তখন মধ্যরাত।

নির্মম পিটুনিতে আবরার লুটিয়ে পড়েন। এর পর নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন ঘাতকরা। মাঝ সিঁড়িতে যেতেই তারা বুঝতে পারেন আবরার মারা গেছেন। সিঁড়িতেই মরদেহটি রেখে তখন ওই স্থান ত্যাগ করেন তারা।

 

টাইমস/এসআই

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার মধ্যেই ভারত সফরের ইঙ্গিত ট্রাম্পের Nov 07, 2025
img
প্রিয়াঙ্কা সরকারের বক্তব্যে নারী সংহতির গুরুত্ব Nov 07, 2025
img
এসএ টোয়েন্টিতে খেলা হচ্ছে না তাইজুলের, বদলি হিসেবে উইলিয়ামসন Nov 07, 2025
img
সঙ্গীত শুধু আমার পেশা নয়, মানুষের সেবা করার একটি পথ: পলক মুচ্ছল Nov 07, 2025
img
যারা সংস্কারের কথা বেশি বলতো, তারা সংস্কার বিরোধী রাজনীতিতে ঢুকে গেছে : আসিফ মাহমুদ Nov 07, 2025
img
জামায়াত নেতার ‘নো হাংকি পাংকি’ বক্তব্য, কড়া সমালোচনায় মাসুদ কামাল Nov 07, 2025
img
চিরসবুজ টলিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত Nov 07, 2025
img
আমরা এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করিনি : নুর Nov 07, 2025
img
চট্টগ্রাম-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ Nov 07, 2025
img
পরবর্তী আইপিএলও খেলবেন ধোনি Nov 07, 2025
ছেলের প্রতি বাবা মায়ের কর্তব্য | ইসলামিক জ্ঞান Nov 07, 2025
ভিকি-ক্যাটরিনা ইনস্টাগ্রামে ঘোষণা করলেন সুখব Nov 07, 2025
img
প্রয়াত ম্যারাডোনাকে ঘিরে নতুন রহস্য উন্মোচিত! Nov 07, 2025
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে জামায়াত Nov 07, 2025
'ভারতকে খুশি করার জন্য সরকার জাকির নায়েককে দেশে আসতে দেয়নি' Nov 07, 2025
বিএনপি বাংলাদেশের একমাত্র শক্তিশালী দল: ফখরুল Nov 07, 2025
img
হাসিনার আমলে বিএনপিকে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছে: খায়রুল কবির খোকন Nov 07, 2025
বিএনপির মনোনয়ন না পেলেও মানুষের ভালোবাসায় ভাসছেন মাহবুবুর রহমান | Nov 07, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে : নায়াব ইউসুফ Nov 07, 2025
img
নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা হলে জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করা হবে: বকুল Nov 07, 2025