আপনাদের নড়াচড়া আমরা দেখেছি, কিন্তু বিনয়টা দেখতে পাই নাই : মাসুদ কামাল

ডাকসু নির্বাচনে আমি দুইটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলব, যেগুলো আগে বলা হয়নি। ওই দুইটি পয়েন্টের একটা পয়েন্ট হলো, ছাত্রদলের যে ভূমিধস পরাজয়, এর পেছনের একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

মাসুদ কামাল নিজের ইউটিউব চ্যানেলের একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, আরেকটা পয়েন্ট হলো, এনসিপির যে ছাত্র সংগঠন ‘বাকছাস’ মানে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’, এদের যে ভয়াবহ পরিণতি এবং যদিও তাদের কাগজে কলমে কোন সম্পর্ক নেই, তবুও এই পরিণতি কিভাবে তাদের মূল সংগঠন এনসিপির একটি সমস্যাটা হতে যাচ্ছে, এটা নিয়ে একটু আলোচনা করব। সবাই জানে তারা আসলে এনসিপিরই সংগঠন।

এনসিবির সমর্থনপুষ্ট একটা দল।

তিনি বলেন, ছাত্রদলের ভয়াবহ পরাজয়ের পিছনে আরেকটা কারণ আগে উল্লেখ করেছি। অনেকবার ওদের দম্ভ অহমকা কি কি, তা নিয়ে দুই-একদিন আমি অনেক কিছু বলেছি। ছাত্রলীগের যে সাপোর্ট ছিল শিবিরের প্রতি, সেটাও বলেছি।

তবে আজকে আরেকটা কারণ আপনারা একটু ভেবে দেখবেন।

তিনি বলেন, কারণটা হলো, দেখুন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যাটা আওয়ামী লীগ আমলে কি ছিল? ছাত্রলীগের একচেটিয়া দাপট। তাদের এই দাপট কেবল বিরোধী রাজনীতির ওপরেই নয়, সাধারণ যারা ছাত্র তাদের জীবনকেও দুর্বিষহ করে দিয়েছিল। কিভাবে? একটা হলো, গণরুম কালচার।

আর দ্বিতীয়টা হল তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জোর করে স্টুডেন্টদেরকে অংশ নিতে বাধ্য করা। হয়তো কালকে পরীক্ষা পড়াশোনা করছে ছাত্ররা। এই সময় তারা তাদের ধরে নিয়ে আসল, আমাদের সঙ্গে মিছিল করতে হবে। মিছিল করতে হতো, না হলে হল থেকে বের করে দিবে।

তিনি বলেন, এই যে ছাত্রলীগ এই কাজটা করতো এর পেছনে আসলে কারণটা কি? মানে ছাত্রলীগের যে গঠনতন্ত্র তাদের যে আদর্শ সেখানে কি এগুলো বলা ছিল? বলা ছিল না।

মূল সমস্যা কোথায় ছিল? মূল সমস্যা হলো, তারা ছিল সরকারি দল। তার মানে সরকারি দল হওয়ার কারণে প্রশাসন অথবা সরকার অথবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যারা আছে, সবাই তাদের কথা শুনতো। বাংলাদেশের সরকারি দল যারা করে, তারা এই প্র্যাকটিসটা কিন্তু করে থাকে। ফলে সরকারি দল হওয়ার কারণে তারা এরকম দাপট দেখাতো। মানুষকে মানুষ মনে করতো না।

তিনি আরো বলেন, এই যে সরকারি দল, এই দুটো শব্দকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ভয় পেয়েছে। এখন নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু এরই মধ্যে আপনি দেখবেন, জাতীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা-নেত্রীরা যেভাবে নিজেদের বাহাদুরি দেখাচ্ছে, কথাবার্তা, তাদের যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এগুলো দেখে মনে হয় ফেব্রুয়ারি আসা পর্যন্ত দেরি তারপরে তো তারা ক্ষমতায় চলে আসতেছে। এই যে তাদের অতি আত্মবিশ্বাসী আচরণ এবং প্রকাশ, এটা দেখে সবাই ভেবেও নিয়েছে যে হ্যাঁ তাহলে তো বিএনপি ক্ষমতা আসছে।

তিনি বলেন, যদি বিএনপি ক্ষমতায় এসে যায় তাহলে ছাত্রদল কি হবে? সরকারি ছাত্র সংগঠন হবে। মানে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্র সংগঠন। এখন সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্র সংগঠন যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে থাকে, তাহলে ফেব্রুয়ারির পর থেকে তাদের আচরণটা কি হবে? এটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করেছে বলে আমার ধারণা। তারা ভেবেছে, যদি ছাত্র সংসদেও সেই সরকারি দল আবার আসে, এটা আগে ছিল আওয়ামী লীগ সরকার এবার বিএনপি সরকার। যদি তারাই আবার আসে, তাহলে বোধয় আমাদেরকে আবার সেই গণ কালচারের মধ্যে ঢুকতে হবে। আবার সেই আমাদের ওপর তারা প্রভাব বিস্তার করবে। সেই একই জিনিস আমাদেরকে কষ্টকর জীবনযাপনে বাধ্য করবে। এটা একটা কারণ বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, আর দ্বিতীয় যে ইস্যুটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই সেটা হলো, এই নির্বাচনে দেখুন ডাকসু নির্বাচনের প্রথম দাবিটা আসলে করেছিল আজকে যারা এনসিপি করেন এই বৈষম্য ছাত্র আন্দোলন তারাই। শুরু থেকেই বলেছিল ডাকসু নির্বাচনটা দেওয়া হোক, দেয়া হোক। কারণ তাদের একটা ধারণা ছিল, যেহেতু তারা আন্দোলনের প্রাধান হিসেবে নিজেদেরকে জাহির করতে পছন্দ করে এবং তারা বলে থাকে তারাই নাকি হাসিনাকে তাড়িয়েছে আর কেউ তাড়ায় নাই। এটা তাদের একক কৃতিত্ব। তাদের এই যে একক কৃতিত্বের দাবিদার হওয়ার ব্যাপারটা, তারা সেখান থেকে মনে করেছিল, তারা বোধয় এই ধরনের ডাকসু নির্বাচন হলে খুব ভালো রেজাল্ট করবে। নিজের মন থেকেই তারা হয়তো বিশ্বাস করে, তারাই সব করেছে আর কেউ কিছু করেনি। এই বিশ্বাসটাও কিন্তু একটা বিপদজনক ব্যাপার।

মাসুদ কামাল আরো বলেন, তারা মনে করেছিল যে বাকছাস তো জিতবেই। তারা নিজেদের এতো জনপ্রিয় ভেবেছিল। এনসিপি গঠন করার পর এবং গঠনের আগেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক এই সমস্ত শব্দ ব্যবহার করেছে তারা। যে সমস্ত কর্মকাণ্ড করেছে তারা, যে সমস্ত দাপট দেখিয়েছে প্রশাসনের এবং বেসরকারি প্রশাসনের সব জায়গায়, তারা যে সমস্ত তদবিরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ আমরা শুনতে পেয়েছি, সেগুলো কিন্তু বিবর্ধিত হতে হতে বেড়ে যায়। সেটা হতে হতে এই ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের কান পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং এটা তাদেরকে কোন বাড়তি মাইলেজ দেয়নি বরং তাদের প্রতি মানুষের একধরনের বিতৃষ্ণা তৈরি করেছে। সেই বিতৃষ্ণার মাত্রাটা কোন পর্যায়ের সেটা এই ডাকসু নির্বাচনে আরো একবার প্রমাণ হলো।

তিনি বলেন, কেউ একটা বড় পদে বসিয়ে দিলে আপনি বড় হয়ে যান না। বরং আপনি বড় না কি ছোট, এটা আপনার আচরণের মাধ্যমে কিন্তু প্রকাশ করতে হবে। সেই আচরণ আপনারা দেখাতে পারেননি। আমি সরি, আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম এই নাগরিক পার্টিকে নিয়ে। তারা যে পারেননি এই জিনিসটা যদি তারা এখনো উপলব্ধি করেন, তাহলে ভালো হবে।

তিনি আরো বলেন, আপনাদের নড়াচড়া আমরা দেখতে পেয়েছি। আপনাদের বিনয়টা আমরা দেখতে পাই নাই। এটা যারা আপনাদের বন্ধু-বান্ধব, যারা আপনাদের সহপাঠী, যারা আপনাদের আন্দোলনের সহযোদ্ধা তাদের কাছে আরো বড় হয়ে ধরা পড়েছে। আমি মনে করি, এখনো সময় চলে যায়নি। আপনারা নতুন রাজনৈতিক দল করেছেন। আপনাদের বয়স আছে সামনে। আপনারা এখনো শিক্ষা নিন। আপনারা অনেক দূর যেতে পারবেন। 

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভোট গণনায় বিলম্ব, চূড়ান্ত ফলের ধারেকাছেও নেই নির্বাচন কমিশন Sep 12, 2025
img
খুলনায় ভোক্তা অধিকারের অভিযানে ১২ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা Sep 12, 2025
img
নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন সুশীলা কার্কি Sep 12, 2025
img
বর্তমান সংবিধান বদলাতে হবে: সারোয়ার তুষার Sep 12, 2025
img
সারা দেশে পরিবেশ রক্ষায় দেড় হাজার মোবাইল কোর্ট অভিযান Sep 12, 2025
img
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা Sep 12, 2025
img
বিরাট কোহলিকে উৎসর্গ করা দৃশ্যে নিজেকে সমর্পণ আহান পান্ডের Sep 12, 2025
সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল ও ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ Sep 12, 2025
img
স্বৈরাচার ও দেশবিরোধী শক্তি গণতান্ত্রিক যাত্রা ব্যাহত করতে চায়: ডা. জাহিদ Sep 12, 2025
img
তফসিলের আগেই উপদেষ্টা পরিষদের ২ ছাত্র প্রতিনিধির পদত্যাগ চান মির্জা ফখরুল Sep 12, 2025
img
জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান নেপালের সেনাবাহিনীর Sep 12, 2025
img
নয়নতারার বিয়ের ডকুমেন্টারিতে নতুন আইনি জটিলতা Sep 12, 2025
img
বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের আবেদন ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমার নির্দেশ Sep 12, 2025
img
নাগরিকত্ব ইস্যুতে সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা খারিজ আদালতের Sep 12, 2025
img
জাকসুর ফলাফল সন্ধ্যায় নয়, প্রকাশ হতে পারে রাত ১০টার পর Sep 12, 2025
img
কাশ্মীরের প্রথম পেশাদার ফুটবল দলকে কেন্দ্র করে আসছে স্পোর্টস ড্রামা Sep 12, 2025
img
ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে : ডা. জাহিদ Sep 12, 2025
img
নেতানিয়াহুর আগ্রাসন সব রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি: পাকিস্তান Sep 12, 2025
img
বিজয়ের সঙ্গে প্রেম ভাঙতেই সামাজিক মাধ্যমে তামান্নার ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা Sep 12, 2025
img
ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের জয় নিয়ে শশী থারুরের উদ্বেগ প্রকাশ, কঠিন জবাব মেঘমল্লার বসুর Sep 12, 2025