মাফরুহী–নজরুল: জাকসু বানচালে বিএনপি পন্থী দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ানোর অভিযোগ

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। নির্বাচনে ভোট কারচুপির বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ না থাকলেও নানা অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতাকে হাতিয়ার বানিয়ে আওয়ামী ও বামপন্থী বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের একটি অংশ নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনকে ইস্যু করে ভিসি পতন চায় আওয়ামী ও বামপন্থী বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের একটা অংশ। এদের মধ্যে রয়েছেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরীন খান। আর নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম৷ কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র মতে জানা যায় এই শিক্ষকত্রয় জাকসু বানচালের চেষ্টায় গত একমাস ধরে নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছেন

এছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাকসু নির্বাচনের দিন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক ও ও অধ্যাপক নজরুলের ইশারায় অধ্যাপক নাহরীন ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ১৫ নং ছাত্রী হলের নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার পায়তারা চালিয়েছেন। মিথ্যে ঘটনাকে মহীরুহ করে জাকসু বানচালের জন্য অধ্যাপক নজরুল জাকসু নির্বাচনে 'প্রশাসন ব্যর্থতা' রয়েছে বলে প্রচার করছেন৷ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্র বলছে, মোট ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। 

ভোটগ্রহণের সময়ের শেষ দিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ভোট গ্রহন শেষ হলে রাতে বামপন্থী কয়েকটি প্যানেল অব্যবস্থাপনা ও কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তবে বাগছাস, ইসলামী ছাত্রশিবির ও স্বতন্ত্র প্যানেল সমালোচনা করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জাকসুতে মোট প্রার্থী ছিলেন ১৭৯ জন। ছাত্রদল ও বামপন্থী প্যানেলগুলো মিলিয়ে ভোট বর্জন করেছেন ৬৮ জন। নির্বাচনে মোট ১৭৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১১ জন প্রার্থী ফলাফলের অপেক্ষায় এবং সকল সংকট মোকাবেলা করে জাকসু নির্বাচন সফল করতে বদ্ধ পরিকর বলে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানিয়েছেন৷ 

শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, নির্বাচন বানচালের আসল নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের মাধ্যমে যারা প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকেও শেষ মুহূর্তে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছেন।

জানা যায়, নির্বাচনী অব্যবস্থাপনার পেছনে মূলত বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। বিশেষ করে গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, যিনি ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক৷ তাদের প্রভাবে একাধিক কেন্দ্রে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়ে ভোটগ্রহণ ব্যাহত হয়। অধ্যাপক নজরুলের ইশারায় অধ্যাপক নাহরীন ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ১৫ নং ছাত্রী হলের নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার পায়তারা চালিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে৷ 

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী ও বাম ধারার বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের এই গ্রুপটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চান, যাতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা যায়। যদিও উপাচার্য প্রশাসনিক পদে বিএনপিপন্থীদের প্রাধান্য দিয়েছেন, কিন্তু উপাচার্য পদ না পাওয়ায় কিছু শিক্ষক ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বিপদে ফেলতে চেয়েছেন। নির্বাচন বানচালের এই চেষ্টা তারই ধারাবাহিকতা।

এদিকে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক। ওই তিন শিক্ষক হলেন- ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের নাহরীন ইসলাম খান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা।

তিনজন বিএনপিপন্থী শিক্ষকের সরে দাঁড়ানো এবং কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখার ঘটনা শিক্ষক রাজনীতির এই অন্তঃকোন্দলের ফল বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে একটি মহলের পক্ষ থেকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ভোটগণনা চলছে এবং শিগগিরই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। 

অন্যদিকে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “যত সমস্যা বা সংকটই থাকুক, আমরা যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করেছি, সুষ্ঠুভাবে শেষ করব।”

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তারেক রহমান এখন দেশের মানুষের কাছে এক ‘আশার বাতিঘর’ : নাছির উদ্দীন Dec 24, 2025
img
হাদি হত্যা: ফয়সালকে পালাতে সহায়তাকারী রাজু ৫ দিনের রিমান্ডে Dec 24, 2025
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার উপায় Dec 24, 2025
img
২০২৬ সালে কোন কোন সিনেমা মাস্ট ওয়াচের তালিকায়? Dec 24, 2025
img
লিভারপুলের নজরে বার্সেলোনার সাবেক তারকা Dec 24, 2025
img
সিলেটে যাত্রাবিরতি পর ঢাকা পোঁছাবে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান Dec 24, 2025
img
ঢালিউডের মেগাস্টারদের দাপট ও নতুন প্রজন্মের উত্থান Dec 24, 2025
img
ওসমান হাদিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন নিলুফার মনি Dec 24, 2025
img
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান Dec 24, 2025
img
বিয়ের আগে শেষবার ‘ব্যাচেলর হানিমুনে’ রাশমিকা- বিজয়! Dec 24, 2025
img
নাহিদ মুস্তাফিজের প্রশংসায় খুশদিল Dec 24, 2025
img
নাক ও ঠোঁটের গড়ন নিয়ে কটাক্ষ, ভেঙে পড়েছিলেন মাধুরী! Dec 24, 2025
img
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : প্রধান উপদেষ্টা Dec 24, 2025
img
পাপারাজ্জিদের বিতর্কে জয়া বচ্চনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন বিকাশ পাঠক Dec 24, 2025
img
‘থ্রি ইডিয়টস’ সিক্যুয়েলে ‘রাজু রাস্তোগি’র চরিত্রে থাকছেন না শারমান জোশি Dec 24, 2025
img
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রদল নেতাকে হত্যা Dec 24, 2025
img
মধুর ক্যান্টিনে ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ১ Dec 24, 2025
img
হাদির খুনিদের গ্রেফতার করতে না পারার খেসারত সিয়ামকে দিতে হয়েছে: জামায়াত আমির Dec 24, 2025
img
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শুভশ্রীর শান্তির বার্তা Dec 24, 2025
img
ইতিহাস গড়লো স্বর্ণের দাম, রুপা-প্ল্যাটিনামেও ঊর্ধ্বগতি Dec 24, 2025