প্রয়াত হয়েছেন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। তার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা। সেখানে ফরিদা পারভীনকে নিয়ে শোক প্রকাশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রতি আক্ষেপের কথাও বলেন তিনি। তার মতে, একজন শিল্পী মারা যাওয়ার পর অনেকেই পাপ-পুণ্য, দোজখ-বেহেশত নিয়ে কথা বলেন, যা উচিত নয়।
কনকচাঁপা বলেন, ‘ফরিদা পারভীন আপা লালনগীতির যে জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করেছিলেন, পুরো জায়গাটি তিনি শূন্য করে নিজের সঙ্গে নিয়ে গেলেন। যারা লালনগীতি শুনতাম, ফরিদা আপাকেই শুনতাম। মূলত যারা লালনের আখড়ায় গান করেন তাঁদের গান এক রকম, আর ফরিদা আপার গান আরেক রকম। আখড়া থেকে গান তুলে এনে আপা উপস্থাপন করেছেন।
জনপ্রিয় এই গায়িকা আরো বলেন, ‘তার কণ্ঠে মায়া, শুধু লালনের কথা বললে তাকে ছোট করা হবে। তাঁর কণ্ঠ অনবদ্য। এককথায় বলতে গেলে, ফরিদা আপার কণ্ঠ তীরের মতো হৃদয় স্পর্শ করত। ভরাট একটা সংগীতাঙ্গন দেখে আমি বড় হয়েছি; সেটাই ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি।
আমাদের মাথার ওপর যারা বটবৃক্ষের মতো ছিলেন, তাদের আমরা হারিয়ে ফেলছি। আমরা খুবই অসহায় হয়ে যাচ্ছি।’
পরে খানিকটা আক্ষেপ ব্যক্ত করে কনকচাঁপা বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনকে আনন্দিত করতে গান শোনেন। কিন্তু যখন কোনো শিল্পী মারা যান তখন পাপ-পুণ্য, দোজখ-বেহেশত নিয়ে তারা অনেক কথা বলেন। সেই মন্তব্যগুলো দেখলে আমি ভীত হয়ে যাই, আমাদের খুব খারাপ লাগে।
একজন মানুষের দাফন সম্পন্ন হয়নি, তখন থেকেই তিনি কত নম্বর দোজখে বা বেহেশতে যাবেন- এসব নিয়ে আলোচনা চলে।’
কনকচাঁপা অনুরোধ করেন, 'যারা অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়, তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ- শিল্পীদের এত পাপী ভাববেন না। আমাদের দেশে পাপ অনেক জায়গায় আছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আছে; কিন্তু আমরা শিল্পী, আমরা শুধু গান করি। আমাদের ঘুষ খাওয়ার জায়গা নেই, দুর্নীতির জায়গা নেই, মিথ্যাচার করার জায়গা নেই, আমাদের অন্যায় করার জায়গা নেই।'
ফরিদা পারভীন মারা গেছেন শনিবার রাতে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে সর্বস্তরের মানুষ ফরিদা পারভীনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে; জোহর নামাজের পর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর কুষ্টিয়ায় মা-বাবার কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করার কথা রয়েছে।
এমকে/এসএন