অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটি দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে বন্ড ও পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ‘বন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড পলিসি রিকমেন্ডেশনস’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশনে এ প্রস্তাব দেয় যৌথ কমিটি।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি।
প্রেজেন্টেশনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, নুরুন নাহার, জাকির হোসেন চৌধুরী, গভর্নরের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। আর বিএসইসি থেকে সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
যৌথ কমিটির প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয় এবং চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় করণীয় নিয়েও বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে এসময় কিছু নীতিগত সুপারিশ তুলে ধরা হয়। যৌথভাবে সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের ওপর এসময় গুরুত্বারোপ করা হয়। একইসঙ্গে যৌথ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়াও কমিটি জাতীয় পরিসরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, বৃহৎ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, আইডিআরএ এবং বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সেমিনার আয়োজনের সুপারিশ করেছে। কমিটির মতে, ‘সকলের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে বন্ড মার্কেট ও পুঁজিবাজারকে ব্যবহারের বিষয়টি প্রচার ও প্রসার করা জরুরি।’
অনুষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে সদ্ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক ঋণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে।
যৌথ কমিটি জানায়, ‘বিশেষ করে দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে বন্ড ও সিকিউরিটিজ ইস্যুর মাধ্যমে অর্থায়নের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা ও বন্ড মার্কেটের তারল্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে গত ১১ মে তার বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজারের সঠিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং উন্নয়নে করণীয় নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা দেন, যার মধ্যে ‘দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহ করে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ শীর্ষক নির্দেশনা অন্যতম।
বিএসইসি জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কমিশন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম শুরু করেছে। গঠিত যৌথ কমিটিও এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সমন্বিত ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন বেগবান হবে বলে বিশ্বাস করছে সংস্থাটি।
এসএস/এসএন