বিএনপি জানিয়েছে, অতিরিক্ত বা বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করা যায় কি না, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের মতামত নেওয়া যেতে পারে।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ঐকমত্য কমিশন। সেখানেই অন্য রাজনৈতিক দলের মতো নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকের একটি অংশে উপস্থিত ছিলেন।
সংবিধান সংশোধনের বিষয়গুলো পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে বলে আসা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এদিন নতুন একটি প্রস্তাব সামনে আনেন।
তিনি বলেন, আমরা ৮২৬টি ছোট-বড় সংস্কার প্রস্তাব পেয়েছি। এগুলো দলে আলোচনা করে লিখিত মতামত দিয়েছি। মাত্র ৫১টি প্রস্তাবে আমরা দ্বিমত করেছি, ১১৫টি প্রস্তাবে আমাদের মতামতসহ ভিন্নমত দিয়ে গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছি।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়েছে প্রায়। মৌলিকগুলো নিয়ে ৮৪৫টি সংস্কার প্রস্তাব হয়। দুই দিন পরে টিকবে না, চ্যালেঞ্জ হয়ে যেতে পারে, এমন কোনো বিষয় আমরা রেখে যেতে চাই না। আমরা যেসব বিষয়ে একমত হয়েছি, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং হয়ে যাবে।
প্রসিডিউরের জন্য বাস্তবায়নে একটু সময় লাগে।
যে ১৯টি সাংবিধানিক বিষয় বাকি থাকে, সেগুলোর বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ আমরা একমত হয়েছি। আমাদের বিবেচনায় ৭০ অনুচ্ছেদের চারটি বিষয়ে এমপিদের স্বাধীনতা না থাকলে ভালো হয়। সর্বনিম্ন দুটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। নোট অব ডিসেন্টের ভাষা উল্লেখ করে সনদ তৈরি হচ্ছে এবং সেভাবে আমরা স্বাক্ষর করব।
যারা জনগণের ম্যান্ডেট পাবে, তারা তাদের নোট অব ডিসেন্ট রক্ষা করে বাস্তবায়ন করবে। এটি কোনো জটিল বিষয় নয়। এগুলো বাস্তবায়ন খুব সহজ। কিন্তু ফোরাম কোনটা? সাংবিধানিক বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদ ছাড়া অন্য কোনো ফোরাম করতে পারে কিনা–এ ব্যাপারে আইনি পরামর্শ দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। আমরা সেখানে যেতে পারি এবং সহায়তা নিতে পারি। এর বাইরে কিছু থাকলে জানান, আমরা একমত। আমরা সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত আছি, তা আগেও বলেছি।
কেন সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে বলা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যায় এ বিএনপি নেতা বলেন, আইনি ভিত্তি নিয়ে আলোচনা হলে তাতে আমরা অংশ নেব। সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। তার আগে কমিশন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে। সেখান থেকে অঙ্গীকারনামার যে ড্রাফট দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা লিখিত মতামত দিয়েছি। যেসব বিষয় পরে টিকবে না, সেগুলো এতে উত্থাপন করা ঠিক হবে না।
তিনি আরো বলেন, কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, তেমন কোনো দলিল হতে পারে না, সংবিধানের ওপর সনদকে স্থান দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এর বাইরেও অনেক পন্থা থাকতে পারে যাতে আমরা এটার বৈধতা দিতে, আইনি ভিত্তি দিতে পারি। আপিল বিভাগের পরামর্শ নিতে পারি আমরা–এটা (সংবিধান সংশোধন) এক্সট্রা কন্সটিটিউশনাল অর্ডার বা স্পেশাল কন্সটিটিউশনাল অর্ডার করা যায় কি না। তাহলে ভবিষ্যতে জুডিশিয়ারিতে এটা চ্যালেঞ্জ করলেও বলতে পারবে যে আমরা মতামত নিয়েছিলাম। এখন সেই পরামর্শ দিতে পারে, নাও পারে।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন বলেন, স্পেশাল কন্সটিটিউশনাল অর্ডার আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) করলেন। আমরা কেউ কিছু বললাম না। ঐকমত্য কমিশন থেকে আমরা আপনাকে দায়িত্ব দিলাম, সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আপনি সিদ্ধান্ত দেন। তারপর আপনি করলেন। কিন্তু যে কোনো একজন নাগরিক যদি এটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে কোথাও যায়, সেটা আপনার গ্লোবাল রেপুটেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। আমরা অনেক আলোচনা করেছি, সেখান থেকে আপনি কোনো মতামত নিতে পারেন। সেই স্বাধীনতা আপনার আছে।
পিএ/টিএ