ইসরায়েল দোহায় হামাসের ওপর হামলা চালিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে কাতারের আমির ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছেন। এ বিষয়ে একক প্রতিক্রিয়া তৈরির বিষয়টি আলোচনা করতে আরব ও মুসলিম নেতারা সোমবার জরুরি বৈঠকও করেছেন।
ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য কাতারের আহ্বানে আরব লীগ ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার যৌথ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। গাজায় যুদ্ধ ও মানবিক সংকট শেষ করার জন্য ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হামাস জানিয়েছে, দোহায় গত সপ্তাহে হামলায় তাদের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বেঁচে আছেন। তবে ওই হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং এতে সমালোচনার ঢেউ তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচনাও রয়েছে।
কাতার গাজার যুদ্ধ শেষ করার আলোচনায় মূল মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। হামাস কর্মকর্তারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখনই ইসরায়েলের হামলা ঘটেছিল।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘যদি কেউ কোনো দলের সঙ্গে আলোচনা চালানো কারো বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে হত্যাচেষ্টা করে, তার উদ্দেশ্য হলো আলোচনা ব্যর্থ করা। তাদের কাছে আলোচনার মানে শুধুই যুদ্ধের একটি অংশ।
আমির আরো বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘আরব অঞ্চলকে ইসরায়েলের প্রভাবশালী এলাকায় পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন, যা একটি বিপজ্জনক বিভ্রম।’
শীর্ষ সম্মেলনের খসড়া চূড়ান্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ‘নৃশংস’ আগ্রাসন সব অর্জিত সম্পর্ককে বিপন্ন করছে, যার মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চুক্তিও অন্তর্ভুক্ত, যা ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েল ও এর প্রধান সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র আব্রাহাম চুক্তি সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে, যার মাধ্যমে ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ‘শুধু বক্তব্য নয়, পদক্ষেপও দরকার’
দোহায় বৈঠক শুরু হওয়ার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলে ভ্রমণে ছিলেন, যা ওয়াশিংটনের অটল সমর্থনের প্রতীক। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুবিও মঙ্গলবার কাতারে যাত্রা করবেন, যা ওয়াশিংটনের আরো এক দৃঢ় মিত্র।
এর আগে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি রবিবার প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সমাজের জন্য দ্বৈত নীতি অবলম্বন বন্ধ করার এবং ইসরায়েলের সব অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদানের সময় এসেছে।’
খসড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দোহায় প্রায় ৬০ দেশের এই সংযোগটি ‘সমষ্টিগত নিরাপত্তার ধারণা’ এবং সাধারণ চ্যালেঞ্জ ও হুমকির মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেবে।
এ সম্মেলনে উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন সৌদি আরবের কার্যত শাসক যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। জর্দানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয় ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও অংশ নিয়েছেন।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ মঙ্গলবার কাতারে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে জরুরি আলোচনা আয়োজন করবে। সৌদি সরকারি সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, ছয় সদস্যবিশিষ্ট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের একটি বিশেষ বৈঠকও সোমবার দোহায় অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যপ্রাচ্যের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে সৌদিভিত্তিক গবেষক আজিজ আলগাশিয়ান বলেন, দোহায় আরব-ইসলামিক বৈঠকে ‘অনেকে কেবল বক্তব্য নয়, বাস্তব পদক্ষেপের দিকেও নজর দিচ্ছে। আমরা সব ধরনের বক্তব্য শেষ করেছি। এখন শুধু পদক্ষেপের পালা বাকি। আর দেখা যাবে সেই পদক্ষেপগুলো কী হবে।’
এসএস/এসএন