নির্মাণ ব্যয় বাড়ায় নতুন ২ মেট্রোরেলে জাপানের বিকল্প ভাবছে সরকার

রাজধানীতে আরো দুটি মেট্রোরেলের কাজ চলছে। এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন ও এমআরটি লাইন-১ রুটের পরিষেবা লাইন স্থানান্তর কাজ শুরু হয়েছে। জাপানি ঠিকাদারের প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকায় বাস্তবায়নাধীন দুটি মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। এই ব্যয় সরকারের প্রাক্কলনের দ্বিগুণের বেশি।তাই বিকল্প চিন্তা করছে সরকার।


সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সহায়তায় প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চলছে। তবে ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন

আহমেদের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনা করেছে। একই সঙ্গে প্রস্তাব পর্যালোচনা করে যৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

নির্ধারিত ব্যয়ে জাইকা কাজ করতে আগ্রহী না হলে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান দিয়ে নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মেট্রোরেলে ব্যয় কয়েক গুণ। আওয়ামী লীগ আমলে দর কষাকষির নামে কর্মকর্তারা দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। বিদেশি ঋণে বিপুল ব্যয়ে আরও দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দেশের মানুষকে এর বোঝা টানতে হবে।

মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। এটির আয় থেকে জাইকার ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে চালু হওয়া লাইন-৬ (উত্তরা থেকে কমলাপুর) এর কাজ শেষ হওয়ার পথে। বাস্তবায়নাধীন দুটি মেট্রোরেল হচ্ছে এমআরটি লাইন-১ (কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও কুড়িল থেকে পূর্বাচল) এবং এমআরটি লাইন-৫ (সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর, গুলশান হয়ে ভাটারা)।

জাইকার কারিগরি সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে সরকার ২০১৯ সালে প্রকল্প দুটির ব্যয় ধরেছিল প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। সরকারের প্রাক্কলনে এমআরটি লাইন-১-এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।

এমআরটি লাইন-৫-এর ব্যয় ধরা হয় ৪১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। দুটি মেট্রোরেলই পাতাল ও উড়ালপথের সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এমআরটি-১ নির্মাণ ও ট্রেন কেনাসহ সব কাজ ১৪টি ভাগে (প্যাকেজে) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ডিপো উন্নয়নের কাজ চলমান। জাপানি ঠিকাদার এই কাজ করছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও কুড়িল থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

আর এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট)-এর মোট দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী এবং নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। বাকিটা পাতালপথে হবে। ষ্টেশনের সংখ্যা ১৪। ইতোমধ্যে পাওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রেও কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের খরচ কমানোর বিষয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনার জন্য গত ২৪ আগস্ট থেকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল দুই সপ্তাহ টোকিও সফর করে। সফরকালে প্রতিনিধি দল জাইকার প্রেসিডেন্ট ছাড়াও জাপান সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে প্রকল্পের খরচ কমানো নিয়ে আলোচনা করেন। ব্যয় কমানোর জন্য পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে প্রতিনিধি দল দেশের ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে পর্যালোচনার কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট খাত বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। কমিটি অন্যান্য দেশের মেট্রোরেল নির্মাণসহ দেশের পরিপার্শ্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে একটি যৌক্তিক ব্যয় প্রস্তাব করবে। নির্ধারিত এ ব্যয় জাইকার কাছে উস্থাপন করা হবে। তারা যদি এ ব্যয়ে কাজ করতে রাজি না হয় তাহলে বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশ বা সংস্থার অর্থায়নে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেবে সরকার।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, এমনিতেই সরকারের ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এরপর এ দুই প্রকল্পে প্রথমে প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে পরে অনেক বাড়ানো হয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ব্যয় হয়তো ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে। কিন্তু বেড়েছে আরো অনেক বেশি। তাই এ ব্যয় কমানোর জন্য পুনরায় পর্যালোচনা করার জন্য জাইকাকে বলা হয়েছে। যদি তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা না হয় তাহলে অন্য কোনো দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, এত উচ্চমূল্যে মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব নয় এমনটি জাইকাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাপানের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মানুষ হিসেবে দেখলে সব সহজ Dec 23, 2025
img
গানম্যান পেলেন এনসিপির যে ৬ নেতা Dec 23, 2025
img
বরিশালে ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় ১২ আসামি কারাগারে Dec 23, 2025
img
খুলনায় শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে আ.লীগ নেতার পদত্যাগ Dec 22, 2025
img
প্রিয়াঙ্কার জন্যই রাজামৌলীর ‘বারাণসী’ ছবির বাজেট বেড়ে ১৩০০ কোটি! Dec 22, 2025
img
পটুয়াখালীতে জামায়াতের এক নেতা বহিষ্কার Dec 22, 2025
img
ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা Dec 22, 2025
img
জকসুতে শিবির প্যানেলের ভিপি-জিএসসহ ৪ প্রার্থীর ছবি বিকৃতি Dec 22, 2025
img

কৌশিক গাঙ্গুলী

টক্সিক মানুষের পেছনে সময় নষ্ট করা বোকামি Dec 22, 2025
img
নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা জনগণ মেনে নেবে না : আমীর খসরু Dec 22, 2025
img
'ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি মানুষ যেন শান্তিতে থাকে' Dec 22, 2025
img
যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, মার্কিন বিশেষ দূতকে প্রধান উপদেষ্টা Dec 22, 2025
img
ক্লাব কিনে ফুটবলে ফিরছেন দানি আলভেস! Dec 22, 2025
img
অনুরাগীদের কৌতূহলের কেন্দ্রে শাহরুখ-দীপিকার 'ভ্যানিটি ভ্যান' Dec 22, 2025
img
ভালোবাসায় সংযম ও শ্রদ্ধার গুরুত্ব স্বস্তিকার মন্তব্য Dec 22, 2025
img
কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ‘না রাখতে’ দেওয়ার হুমকি বিজেপির শুভেন্দুর Dec 22, 2025
img
এই বাংলাদেশকে আমি চিনতে চাই না : মিঠুন চক্রবর্তী Dec 22, 2025
img
নিরাপত্তা বিবেচনায় ২০ জনকে গানম্যান দেয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 22, 2025
img
'এই আতঙ্ক কখনোই কাম্য নয়', বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দেব Dec 22, 2025
img
বিশ্বকাপ জয়ের বিষয়ে নেইমারের চাঞ্চল্যকর মন্তব্য Dec 22, 2025