বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, বহিরাগতদের হামলা ও পরবর্তীতে সৃষ্ট অচলাবস্থার সমাধান হয়েছে। এর ফলে এক মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামী ৫ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হবে। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. হেলাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, গত ৩১ অক্টোবর অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্লাস ও হলসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করায় আগামী ৫ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসসমূহ চালু হবে। সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ করবেন। পাশাপাশি আগামী ৩ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহে শিক্ষার্থীরা উঠতে পারবেন বলেও জানানো হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীমসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ। আন্দোলনকারী পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদেরও একটি প্রতিনিধি দল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শিবলী সাদী বলেন, আমরা আজকের বৈঠকে শিক্ষকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আন্দোলনের সময়ে আমাদের কিছু আচরণ হয়তো শোভন ছিল না, সেটি আমরা অনুধাবন করেছি। স্যারদের সঙ্গে আমাদের আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। ভিসি স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আন্দোলনের কারণে কোনো শিক্ষার্থী অ্যাকাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, কিংবা হেনস্তার শিকার হবে না।
বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির প্রেক্ষিতে কিছু আচরণগত ত্রুটি করেছিল, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে আমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছে। আমরা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাদের ক্ষমা গ্রহণ করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অ্যাকাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং বাকৃবির মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে যদি সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি হয়, সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের কেন্দ্র, এখানে দ্বন্দ্ব বা সংকটের কোনো স্থান নেই। ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমরা সতর্ক থাকব। ন্যায্য দাবি পূরণে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সবার- এটি আমাদের মায়ের সমান। তাই এখানে কারো শিক্ষা জীবন যেন এক মুহূর্তের জন্যও ব্যাহত না হয়, সেটা আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব। আমরা চাই সবাই মিলেমিশে একটি সুন্দর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তুলুক। শিগগিরই ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হবে এবং আমরা সবাই মিলে বাকৃবির মান-মর্যাদা ধরে রাখব।
এসএস/এসএন