পর্যটননির্ভর দেশ মালদ্বীপে রেমিটেন্স প্রেরণে একক আধিপত্য বজায় রেখেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘মালদ্বীপ মনিটারি অথরিটি’ (এমএমএ) প্রকাশিত সর্বশেষ বাৎসরিক প্রতিবেদন ‘পেমেন্ট বুলেটিন–২০২৪’-এ উঠে এসেছে এ তথ্য।
সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মালদ্বীপ থেকে দেশে পাঠিয়েছেন ১১২ মিলিয়নেরও বেশি মার্কিন ডলার, যা দেশটির মোট বহির্বিশ্ব রেমিটেন্স লেনদেনের প্রায় ৭২ শতাংশ। ২০২৩ সালের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
দেশটিতে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কাউন্সেলর মো. সোহেল পারভেজ জানান, প্রতিবেদন অনুযায়ী মালদ্বীপে কর্মরত বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা সর্বমোট প্রায় ১৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থই সবচেয়ে বেশি। তালিকায় এরপর রয়েছে নেপাল (৫ শতাংশ), মিশর (৪ শতাংশ), ফিলিপাইন (৪ শতাংশ) ও ভারত (২ শতাংশ)।
মালদ্বীপের মোট বহির্মুখী রেমিটেন্স লেনদেন ২০২৪ সালে দাঁড়ায় ১৫৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১২১ শতাংশ বেশি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দেশটির মোট অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্স আয় যেখানে মাত্র ৮ শতাংশ, সেখানে ৯২ শতাংশই এসেছে বিদেশি কর্মীদের মাধ্যমে।
মালদ্বীপে লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করছেন। তবে এদের একটি বড় অংশ এখনো বৈধ কাগজপত্রের বাইরে থেকে কর্মরত। বৈধতা সমস্যা, প্রতিদিনের ধরপাকড় অভিযান ও নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন।
বিএনপি মালদ্বীপ শাখার সভাপতি মো. খলিলুর রহমান বলেন, “দেশে গণঅভ্যুত্থানের পর প্রবাসীরা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বৈধ চ্যানেলেই টাকা পাঠাবেন। এখনও তারা সেই প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছেন। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে মালদ্বীপে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু এবং যেকোনো একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা খোলার প্রয়োজন।”
এনবিএল মানি ট্রান্সফার মালদ্বীপের প্রধান রেমিটেন্স চ্যানেল। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মাসুদুর রহমান জানান, “প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে মোট প্রেরিত অর্থের ৫৬ শতাংশই বাংলাদেশিরা এনবিএলের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়েছেন। আমরা নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা ও সেমিনারের আয়োজন করছি যাতে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়ানো যায়।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন কর্মীর আগমন এবং ব্যাংকিং খাতে প্রবাসীদের আস্থা ফিরে আসায় রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।” শ্রম কাউন্সেলর মো. সোহেল পারভেজ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তাদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি রেমিটেন্স প্রবাহ টিকিয়ে রাখতে প্রবাসীদের আরও উৎসাহিত হওয়ার আহ্বান জানান। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় মালদ্বীপের সঙ্গে জোরালো কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে যদি স্থানীয় মুদ্রায় রেমিটেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়, তবে এ প্রবাহ আরও স্থায়ী ও শক্তিশালী হবে।
এসএস/এসএন