ইনুর বিরুদ্ধে ৮ অভিযোগ গ্রহণ করল অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)’র সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে উসকানি, ষড়যন্ত্র, হত্যা, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগ ও নিপীড়নমূলক কৌশলে সমর্থনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে।    

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। শুনানির পর তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

এই ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি ৩৯ পৃষ্ঠার। চারটি ভলিউমে এক হাজার ৬৭৯ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টারি অ্যাভিডেন্স আমরা দাখিল করেছি। সঙ্গে তিনটি অডিও ও ছয়টি ভিডিও দাখিল করা হয়েছে।

এই মামলায় ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি হাসানুল হক ইনু। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

প্রথম অভিযোগ (গণমাধ্যমে প্ররোচনা): জুলাই আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত, সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন দমন এবং আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আসামি হাসানুল হক ইনু জাসদের প্রধান হিসেবে গত বছর ১৮ জুলাই ‘মিরর নাও’ নামের একটি ভারতীয় গণমাধ্যমে উসকানি  দিয়েছেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ (দেখামাত্র গুলি): গত বছর ১৯ জুলাই গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইনু উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন, কারফিউ জারি এবং আন্দোলনকারীদের ‘শুট অ্যাট সাইট’ অর্থাৎ দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাসানুল হক ইনু ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাস্তবায়নে প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি তাতে সহায়তা করেছেন।

তৃতীয় অভিযোগ (কুষ্টিয়ায় দমন-পীড়ন): গত বছর ২০ জুলাই হাসানুল হক ইনু তাঁর নিজ জেলা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে ফোন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র-জনতার ছবি দেখে তালিকা তৈরি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের ফলে কুষ্টিয়া পুলিশের একটি অংশ এবং ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র ক্যাডাররা গত বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালালে ছয়জন নিহত হন।

চতুর্থ অভিযোগ (লিথাল উয়েপন):  সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার, ছত্রীসেনা নামিয়ে ও হেলিকপ্টার দিয়ে বোম্বিং করে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও  নির্যাতনের ষড়যন্ত্র করেন ইনু। গত বছর ২০ জুলাই তিনি এ নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

পঞ্চম অভিযোগ (টিভি চ্যানেলে উসকানি): গত বছরের ২৭ জুলাই আসামি হাসানুল হক ইনু নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলে আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ওইসময় তিনি দেশে সরকারের কারফিউ জারি, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার ও নির্যাতনের কৌশলকে সমর্থন করেন তিনি।

ষষ্ঠ অভিযোগ (জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব): গত বছর ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের সভায় হাসানুল হক ইনু আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোটের ক্যাডারদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনকে বৈধতা দেন।

সপ্তম অভিযোগ (কারফিউ ও গুলিবর্ষণে সমর্থন): গত বছর ৪ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের সিদ্ধান্ত সমর্থন ব্যক্ত করে তাঁর দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন ইনু।

অষ্টম অভিযোগ (কুষ্টিয়ায় আন্দোলনে হত্যা):  সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাসানুল হক ইনুর ষড়যন্ত্র ও নির্দেশে গত বছর ৫ আগস্ট কুষ্টিয়ায় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পুলিশের উপস্থিতিতে নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। তাদের গুলিতে শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো. উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী এবং চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ শহীদ হন।

এবি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিসরে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি তরুণী Nov 13, 2025
img
মোটরসাইকেলে এসে অটোরিকশায় আগুন দিয়ে পালাল দুর্বৃত্তরা Nov 13, 2025
img
রব এডওয়ার্ডসকে হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দিল ওলভস Nov 13, 2025
img
জেনে নিন আজ দেশে কত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ Nov 13, 2025
শেখ হাসিনার ডাকসুর পদ বাতিল নিয়ে যা বলছেন ডাকসুর জিএস Nov 13, 2025
ডাকসুর ২য় কার্যনির্বাহী সভায় যা বললেন সাদিক কায়েম Nov 13, 2025
এত ত্যাগের পর আবারও গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখিন: খসরু Nov 13, 2025
ফ্যাসিস্ট বিদায়ের আন্দোলনের সফলতা তারেক রহমানের হাত ধরে হয়েছে : সালাহউদ্দিন আহমদ Nov 13, 2025
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় স্থগিত যুক্তরাজ্যের Nov 13, 2025
img
বিশৃঙ্খলা রোধে চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন, সর্বোচ্চ সতর্কতায় পুলিশ Nov 13, 2025
পিরোজপুরে সিগনেচার রোডে নির্মাণকালে দুর্ঘটনায় আহত শিশুর হাতেই হলো উদ্বোধন Nov 13, 2025
img
নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ ট্রাম্পের Nov 13, 2025
গণভোট ইস্যু নিয়ে যা বললেন তারেক রহমান! Nov 13, 2025
img
ডিএমপি কমিশনারকে নিয়ে অপপ্রচার: কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি Nov 13, 2025
img
আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা Nov 13, 2025
img
নওগাঁয় রেলওয়ে স্টেশনের ২ টি দোকানে ভয়াবহ আগুন Nov 13, 2025
img
হতাশ হলেও হাল ছেড়ে দিতে নারাজ আইরিশ কোচ Nov 13, 2025
img
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ঠেকাতে হাসনাত আবদুল্লাহ একাই যথেষ্ট: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Nov 13, 2025
img
শেখ হাসিনার মতো তাদের সেফ এক্সিটের সুযোগ থাকবে না: সাদিক কায়েম Nov 13, 2025
img
পেরুতে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা, খাদে পড়ে প্রাণ গেল অন্তত ৩৭ জনের Nov 13, 2025