মনে হয়েছিল এবার অন্তত অপচয় রোধ হবে : মাসুদ কামাল

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, সকালের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্ট, খবর ও মন্তব্য আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিছু দেখে বিরক্ত হয়েছি, কিছু দেখে মনে হয়েছে কৌতুক। আবার কিছু দেখে সত্যিই বিব্রত হয়েছি। তবে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে একটি বিষয়, আমাদের প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং সেই সফরে তার সঙ্গে থাকা বিশাল বহর।

সম্প্রতি মাসুদ কামাল নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এসব নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আগের সরকারের আমলে আমরা প্রায়ই দেখতাম, রাষ্ট্রনেতা বিদেশ সফরে বড় বহর নিয়ে যেতেন। ১০০, ১৫০, এমনকি ২০০ জন পর্যন্ত। তখন এইসব সফর নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনা হতো, হাস্যরস হতো এবং সবাই প্রশ্ন তুলত, এই বিশাল বহরের খরচ কে বহন করছে? অনেক সময় বলা হতো, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা নিজেদের খরচে যাচ্ছেন, কিন্তু দেখা যেত, ওইসব লোকজন পরে সরকার থেকে সুযোগ-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন।

তখনো প্রশ্ন ছিল, সরকারি সফরের আড়ালে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে না তো?

তিনি আরো বলেন, তখনকার সরকারকে আমরা বলতাম স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী। জনগণের গণ-আন্দোলনে সেই সরকার বিদায় নিয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, পরিবর্তনের শুরু হয়েছে। নতুন সরকার আসার পর জাতিসংঘে যাওয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি মাত্র সাতজনকে নিয়ে যাচ্ছেন।

আমরা তখন আশাবাদী হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, এবার অন্তত অপচয় রোধ হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল, সাতজন নয়, গেছেন ৫৭ জন এবং এবার সেই সংখ্যাটা গিয়ে ঠেকেছে ১০৪-এ।
মাসুদ কামাল প্রশ্ন তোলেন, এত মানুষ কেন গিয়েছে? কী কাজে? তালিকায় দেখা গেছে, উপদেষ্টার কন্যারাও গেছেন এবং ফাইভ স্টার হোটেলে অবস্থান করছেন। কে দিচ্ছে সেই খরচ? জনগণের করের টাকা? অনেক উপদেষ্টার নাম এসেছে, যাদের ভূমিকা অস্পষ্ট।

একজন উপদেষ্টা বক্তৃতা চলাকালে মোবাইলে ব্যস্ত ছিলেন। এটাই কি দায়িত্বশীল আচরণ? আরো দেখছি, পুরো প্রেস উইং গিয়েছে ৫-৬ জন। কিন্তু সেখানে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তারা ক্ষিপ্ত হয়েছেন, কেউই স্পষ্ট উত্তর দেননি।

তিনি বলেন, বিদেশ সফর মানেই বিলাসিতা নয়। একটি দরিদ্র দেশের প্রতিনিধিরা অন্যদের পয়সায় এমন আরাম-আয়েশ করলে তা কষ্টদায়ক। বিশেষ করে যখন আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এই সরকার অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর কমাবে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে সেই পুরনো অপচয় ও গা-জোয়ারি ব্যবস্থাই বহাল। এই ১০৪ জনের মধ্যে অনেকে আবার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতাও, যাদের বিদেশে গিয়ে নিউ ইয়র্ক পুলিশের কাছ থেকে হুঁশিয়ারি পেতে হয়েছে ‘হোটেলের বাইরে যাওয়া যাবে না, নিরাপত্তা দিতে পারব না।’ তাহলে প্রশ্ন হয়, তাদের কি এই সফরে আসাটা জরুরি ছিল?

মাসুদ কামাল বলেন, যখন দায়িত্বশীল, শিক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মানুষদের কথাবার্তা ও কাজে মিল পাওয়া যায় না, তখন খুব কষ্ট লাগে। তারা যদি জনগণের কষ্ট না বোঝেন, অন্যের টাকায় নিজের ফুর্তি চালান, তাহলে পরিবর্তনের স্বপ্নটা ধূলিসাৎ হয়।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আর্জেন্টিনার অনুশীলনে স্পেনে বিশাল জনসমাগম, মেসির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ Nov 14, 2025
img
ইমাম প্রশিক্ষণে সৌদি সরকারের সহায়তার আশ্বাস Nov 14, 2025
img
আজ থেকে শুরু খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা Nov 14, 2025
img
আমি ব্যর্থ হয়েছি, জোড় হাতে ক্ষমা চাইছি: শাওন Nov 14, 2025
img
দেশের ৪ বিভাগে নতুন কমিশনার Nov 14, 2025
img
আড়াইহাজারে বিএনপি-আওয়ামী লীগ দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ১৫ Nov 13, 2025
img
এই ফলাফলে খুশি নই, হতাশাজনক: ক্যাবরেরা Nov 13, 2025
img
আরো ১৪ জেলায় নতুন ডিসি Nov 13, 2025
img
ভারত ম্যাচের আগে হামজাকে নিয়ে দুঃসংবাদ Nov 13, 2025
img
প্রশাসন নিশ্চুপ থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে: গয়েশ্বর Nov 13, 2025
img

অ্যাটর্নি জেনারেল

ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এই বিশ্বাস থেকে বিজয়া পুনর্মিলনীতে এসেছি Nov 13, 2025
img
'দর্শকের উন্মাদনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি প্রচুর স্বার্থত্যাগ করি' Nov 13, 2025
img
একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন জাতির সঙ্গে তামাশা: রেজাউল করীম Nov 13, 2025
img
হামজা উঠে যাওয়ায় সুবিধা হয়েছে : নেপাল কোচ Nov 13, 2025
img
চাঁদপুর-৫ আসনে এনসিপির মনোনয়ন ফরম কিনলেন মাহাবুব আলম Nov 13, 2025
img
শীত নিয়ে নতুন বার্তা দিলো আবহাওয়া দপ্তর Nov 13, 2025
img
আ.লীগ-যুবলীগের মধ্যে ঢুকে জামায়াতের লোকজন প্রাণ বাঁচিয়েছিল : হাফিজ ইব্রাহিম Nov 13, 2025
img
এনসিপি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইয়েদ জামিল Nov 13, 2025
img
তুরস্কের সুন্দরীকে বিয়ে করলেন 'থ্রি ইডিয়েটস' সিনেমার মিলিমিটার Nov 13, 2025
img
বিশ্ববাজারে আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম Nov 13, 2025