ট্রাম্পের চাপে জাতিসংঘে প্রতিবাদী ভাষণ দেবেন নেতানিয়াহু

জাতিসংঘে শুক্রবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি প্রতিবাদী বার্তা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গাজা নিয়ে একটি চুক্তি করতে আগ্রহী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরল চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি।

গাজায় দুই বছরের বিরামহীন হামলার প্রতিবাদে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং আরো কয়েকটি পশ্চিমা শক্তি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ার কয়েকদিন পর নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।

ইসরাইলি ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন ও তার অতি-ডানপন্থী মিত্ররা স্বাধীন ফিলিস্তিনের বাস্তব সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার কথা ভাবছে।

কিন্তু সাধারণত নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র ট্রাম্প গাজায় একটি শান্তি পরিকল্পনা পেশ করার সময় সংযুক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। সেখানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের নিরস্ত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত ভয়াবহ হামলা চালানোর ফলে ইসরাইলি প্রতিশোধের সূত্রপাত করেছিল।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি ইসরাইলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না। ’ ‘না, আমি তা হতে দেব না। এটা হবে না।’ ট্রাম্প বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি সোমবার ওয়াশিংটনে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করাসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে যাওয়ার এক অস্বাভাবিক পথ বেছে নেন। যার মধ্যে জিব্রাল্টারের সংকীর্ণ প্রণালীর ওপর দিয়ে বিমানে ভ্রমণও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট বন্ধু ও বৈশ্বিক আলোচক স্টিভ উইটকফকে ম্যানহাটনে নেতানিয়াহু যেখানে অবস্থান করছিলেন সেই কড়া পাহারায় ঘেরা বিলাসবহুল হোটেলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।


বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন তরুণী আন্দ্রেয়া মিরেজ বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীরা কোনো মানসিক শান্তির যোগ্য নয়। তাদের কোনো ঘুমের যোগ্য নয়’। এই সময় প্রায় ২০ জন বিক্ষোভকারী ও একই সংখ্যক নেতানিয়াহুর সমর্থককে বাইরে দেখা গেছে।

টাইমস স্কয়ার থেকে শুক্রবার নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারের দাবিতে একটি মিছিলের পরিকল্পনা করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। নেতানিয়াহু পশ্চিমা সমালোচকদের ও জাতিসংঘের সমালোচনা করেছেন। পশ্চিমা ও জাতিসংঘকে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ট্রাম্পকে অমান্য করতেও ভয় পাননি। মার্কিন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইরান, কাতার ও সিরিয়ায় সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছেন।
আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের জন্য জাতিসংঘের অনুসরণকারী রিচার্ড গোয়ান বলেছেন, ‘আমি মনে করি নেতানিয়াহুর সুর চরমভাবে কঠোর হবে’।

তিনি বলেছেন, ‘তিনি গাজায় তার অভিযানের পক্ষে বা ব্যাখ্যা দিতে জাতিসংঘে আসছেন না। তিনি ইসরাইলকে সমর্থন করতে ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনা করতে আসছেন, বিশেষ করে এই সপ্তাহের শুরুতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর নিন্দা জানাতে আসছেন’।

ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসকে ভিসা না দেওয়ার বিরল পদক্ষেপ নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার ভিডিওর মাধ্যমে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন তিনি। আব্বাস বলেছেন, তার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বী হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ থাকা উচিত নয় এবং ৭ অক্টোবরের হামলা ও ইহুদি-বিদ্বেষ উভয়েরই নিন্দা করেন।

গোয়ান সন্দেহ করেছিলেন, আব্বাসের বক্তৃতা নেতানিয়াহুকে প্রভাবিত করবে। তিনি বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে নেতানিয়াহু কেবল হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণারই বিরোধী নন বরং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মৌলিক ধারণারও বিরোধী’।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফের নারায়ণগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে দুর্বৃত্তদের আগুন Nov 17, 2025
img
ময়মনসিংহে খোলা ম্যানহোলে পড়া নারীকে ৩ দিন পর জীবিত উদ্ধার Nov 17, 2025
img
সম্পর্ক নিয়ে গভীর বার্তা অভিনেত্রী হিনা খানের Nov 17, 2025
img
মির্জা ফখরুলের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান, বিএনপি নেতাকে শোকজ Nov 17, 2025
img
বিএনপি গণমানুষের দল : ইসরাফিল খসরু Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা-বিজিবি মোতায়েন Nov 17, 2025
img
খরায় পানির সংকট, কৃত্রিম বৃষ্টির উদ্যোগ ইরানের Nov 17, 2025
img
ফের পর্দায় ফিরতে চলেছে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার ৩’ Nov 17, 2025
img
ধানমন্ডি ৩২ এর সামনে ককটেল নিক্ষেপ Nov 17, 2025
img
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আল্লাহর সেনাবাহিনী : সেনাপ্রধান Nov 17, 2025
img
এক মাসে ২৮২ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে নেতানিয়াহুর দেশ Nov 17, 2025
img
আলকারাসকে হারিয়ে ফের এটিপি ফাইনালের শিরোপা জিতলেন সিনার Nov 17, 2025
img
ক্যারিবীয় সাগরে পৌঁছাল বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কিন বিমানবাহী রণতরী Nov 17, 2025
img
জেনে নিন আজ দেশে কত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ Nov 17, 2025
img
ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলো সাবেক আইজিপি মামুনকে Nov 17, 2025
img
গণতন্ত্রের লড়াইয়ে মওলানা ভাসানী পথপ্রদর্শক : তারেক রহমান Nov 17, 2025
img

ড. আহসান এইচ মনসুর

ইসলামী ব্যাংক থেকে এক পরিবার তুলেছে ৫০ হাজার কোটি Nov 17, 2025
img
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৫ জনের Nov 17, 2025
img
আজারবাইজানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দাপুটে জয় ফ্রান্সের Nov 17, 2025
img
দাপুটে জয়ে ভারতকে উড়িয়ে সেমিতে পাকিস্তান Nov 17, 2025