বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে ভারত থেকে বাংলাদেশে জোরপূর্বক পুশব্যাক করা ৬ ভারতীয় নাগরিককে অবিলম্বে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বীরভূম জেলার দুই পরিবারের মোট ছয় সদস্যকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সোনালী বিবি নামে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও।
সোনালি ও তার পরিবার দিল্লির রোহিণীতে প্রায় দুই দশক ধরে কাগজ কুড়োনো ও গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। পরিবারের অভিযোগ, জুন মাসে দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে তাদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। গত ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে, সোনালির পুশব্যাক নিয়ে করা হেবিয়াস কর্পাস মামলা শুনবে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মামলাতেই শুক্রবার ৬ ভুক্তভোগীকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ আপাতত মুলতুবি রাখার আবেদন জানায় কেন্দ্র। ওই আবেদনও নাকচ করে দেয় আদালত। বিজেপি সরকার সোনালী বিবিসহ এই ছ’জনকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এদিন সেই পদক্ষেপের সমালোচনা করে আদালতের স্পষ্ট মন্তব্য, তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণিত এবং তাদের দেশে ফেরানোর দায়িত্ব সরকারেরই।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এদিন শুনানিপর্বেই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তীর বক্তব্য, ঘটনা দিল্লিতে ঘটেছে, তাই কলকাতা হাইকোর্টের এতে এখতিয়ার নেই। তিনি অভিযোগ করেন, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হয়েছে এবং এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়। দিল্লি পুলিশের আইনজীবীর দাবি, সোনালির পরিবার এখনও পর্যন্ত হলফনামায় প্রমাণ করেনি যে তারা বাংলাদেশি নন।
পাল্টা বিচারপতি চক্রবর্তী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আটকের নির্দেশে লেখা আছে তাদের বাঙালি বস্তি থেকে আনা হয়েছে। কেবল তাই বলে কি বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করবেন? শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, আইন অনুযায়ী অন্তত ৩০ দিন আটক রেখে তদন্ত করা দরকার। অথচ সোনালি বিবিকে ২৬ জুনই বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। আদালতের প্রশ্ন ছিল, ‘মাত্র দু’দিনে কীভাবে সিদ্ধান্ত হলো যে তারা বাংলাদেশি? এত তাড়াহুড়ো কেন করা হলো?’
বেঞ্চ মামলাকারীর আইনজীবীদেরও প্রশ্ন করে জানায়, দেশ থেকে বহিষ্কারের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। তাই কোন ভিত্তিতে আদালত নির্দেশ দেবে, তা স্পষ্ট করতে হবে।
ইএ/টিকে