সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর লোগো পরিবর্তন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান প্রশ্ন তুলেছেন, জামায়াত কি তাদের নিজস্ব ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থেকে সরে আসছে? তারা কি এখন সেই আদর্শ নিয়ে লজ্জাবোধ করছে এবং একটি আধুনিক, প্রগতিশীল রাজনীতির পথ বেছে নিতে চাইছে?
এই বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেল জাহেদস টেইক-এ বিস্তারিতভাবে মতামত দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ছাত্রশিবিরের অনেক কার্যক্রম যেমন ছাত্রকল্যাণ, কোচিং, হোস্টেলে সহায়তা, বেসরকারি সাহায্য প্রশংসনীয়; তবে তাদের ব্যয় ও স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনে ব্যয় সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, কোনো প্রকার টাকার খেলা যেন না হয়।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করলেই কিন্তু রাজনীতিতে জয় নয়।
জামায়াত যে তাদের ইসলামী রাজনীতি হঠাৎ ভাটা দিয়ে মধ্যপন্থী কল্যাণমূলক পথে যেতে শুরু করেছে সেটি স্পষ্ট। তারা এখন এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দিচ্ছে যারা হিজাব পরেন না, পুরুষ প্রার্থীরা প্রচলিত পোশাকে ঘোরেন; জামায়াত শিবির তাদের প্রতিক্রিয়াশীল এক ধরনের রক্ষণশীল রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসছেন বলে অনেকে প্রশংসা করছেন।
তিনি বলেন, জামায়াতের পুরনো লোগোতে ছিল গম্বুজ, ‘আল্লাহ’ লেখাসহ ‘দ্বীন কায়েম করো’ এসব স্পষ্টভাবে দেখা যেত। নতুন লোগোয় সেই উপাদানগুলিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, কিছু সংবাদে বলা হয়েছে কলমের দিকে আল্লাহু লেখা থাকতে পারে, কিন্তু প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
তিনি প্রশ্ন করেন, জামায়াত কি তার নিজের রাজনীতির ওপর লজ্জা পাচ্ছে? তিনি বলেন, তারা নামে ‘ইসলাম’ রেখে মধ্যপন্থী রাজনীতি করছে।জামায়াতকে অফিশিয়ালি বলতে হবে তারা শরিয়া কায়েম করবেন কি, করবেন না। নামের সাথেই যদি ইসলাম থাকে, তাহলে তার সঙ্গে তার রাজনীতির সমন্বয় জনগণের সামনে স্পষ্ট হওয়া দরকার।
তিনি আরো বলেন, ইসলাম শুধু রিচুয়াল নয় সেটা আচরণ, চরিত্র ও নৈতিকতার ব্যাপার।
আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে রিচুয়ালের প্রবণতা বাড়লেও, সত্যিকার অর্থে চরিত্র ও নৈতিকতা কতটা বদলেছে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে, তারা কি এখনও ইসলামী রাজনীতির ধারায় আছে? তারা কি এখনো শরিয়া আইন কায়েমে আগ্রহী? কারণ, শরিয়া বিষয়ে ইসলামী দলগুলোর মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য। একেক দল একেকভাবে ব্যাখ্যা করে, এমনকি কেউ কেউ অন্য দলের শরিয়া ব্যাখ্যাকে বাতিল বলে, একে অপরকে ধর্মচ্যুত করতেও পিছপা হয় না। এই প্রেক্ষাপটে, জামায়াত কী বোঝে শরিয়া বলতে, তা স্পষ্টভাবে জানানো জরুরি। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পরে দেশের রাজনীতিতে জামায়াতের সম্ভাব্য নতুন অবস্থানকে কেন্দ্র করে আলোচনা চলছে।
কেউ কেউ মনে করেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে জামায়াত একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। এমন ভাবনার পেছনে কিছু সাংবাদিক ও সিভিল সোসাইটির সদস্যরাও ভূমিকা রাখছেন।
তিনি বলেন, জামায়াত যদি সত্যিই নতুন রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে সামনে আসতে চায়, তাহলে তাদের উচিত নতুন লোগো পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়ায় তারা যে দিকটি নিচ্ছে, সেটির রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান স্পষ্টভাবে জাতির সামনে তুলে ধরা। জনগণের অধিকার আছে জানার, তারা আদতে কী রাজনীতি করছে এবং ভবিষ্যতে কোথায় যেতে চায়।
এমআর/টিকে