খাগড়াছড়ির সেই শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদ। এ ঘটনায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার কাছে জমা হয়। পরে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনটি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
সেই ডাক্তারি প্রতিবেদন হাতের পাওয়ার পর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে, সেই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। অথচ মিথ্যা একটা অভিযোগ তুলে একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এখন তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা ইস্যু করে পরিকল্পিতভাবে আন্দোলন করেছে। যারা জড়িত, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। ২৪ তারিখ থেকে জেলায় মিছিল মিটিং করা হয়েছে। অবরোধ দেওয়া হয়েছে। জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। পূজার উৎসবের আমেজ নষ্ট হলো অবরোধের কারণে। পর্যটক আসতে পারেনি।’
সহিংসতায় প্রাণহানির কথা তুলে ধরে আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘তিনটা জীবন ঝরে গেছে, যা খুবই দুঃখজনক। তাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।’
ধর্ষণের আলামত পরীক্ষায় তিন চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দেওয়া খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক জয়া চাকমা বলেন, ‘সবধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা করেছি। কিন্তু ধর্ষণের আলামত পাইনি।’
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ জয়া বলেন, ‘আমাদের দলে হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন ও নাহিদা আকতার ছিলেন।’
জেলা সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদ বলেন, ‘কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে।’
মেডিকেল বোর্ড প্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘ওই ছাত্রীর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি ক্ষেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
এরই মধ্যে ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ব্যানারে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু করা হয় খাগড়াছড়িতে, যা পরে সহিংস হয়ে ওঠে।
১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি অতিরিক্ত সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। রোববার ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেখানে দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে নিহত হয় তিনজন যুবক। সেনাবাহিনীর এক মেজর ও ১২জন সেনাসদস্য, থানার ওসিসহ চার পুলিশ সদস্য এবং আরও প্রায় ২০-২৫ জন আহত হন। সহিংসতার আগুনে পুড়ে ছাই হয় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরির বাসভবনসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, গাড়ি। এতে আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয় অনেক নিরীহ গ্রামবাসী।
টিজে/এসএন