নভেম্বরে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবি, ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেছেন, স্বৈরাচারী পতিত হাসিনা সরকার কথা দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন তরী তিস্তার তীরে নিয়ে এসে ডুবিয়ে দিয়েছিল। আমরা আর আশাহত হতে চাই না। আমরা চাই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রের নিজস্ব কোষাগারের টাকা দিয়েই নভেম্বরে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হোক। পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারে যারা আসবেন তারা এই কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকালে রংপুর চেম্বার ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম ফেইজের কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা। ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ বছর মেয়াদি তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় (৫ বছর) বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের কাছে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, চীনের সঙ্গে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট এখনো হয়নি। এ বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে চীন কাজ করছে। চলতি বছরের শেষে চীনের সঙ্গে প্রযুক্তি এবং ঋণ চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে। এ কাজের জন্য জরুরি প্রয়োজন আগামী একনেক সভায় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা কাজের শুভ উদ্বোধন করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে নেওয়া হবে।

আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, বৈষম্যপীড়িত তিস্তা অববাহিকার ২ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা। এই দাবিতে 'জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই' স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ব্যানারে গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ১১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত তিস্তার দুই তীরে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচিতে তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টের প্রতিটিতে লাখো মানুষ অংশ নেয়। দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তা পানি চুক্তি সম্পাদনের দাবিতে লাগাতার এ কর্মসূচির সমাপনীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লাখো মানুষের সমাবেশে উত্থাপিত দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের পাশাপাশি তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদসহ এ অঞ্চলের সব রাজনৈতিক দল, জাতীয় নেতৃবৃন্দ, ছাত্র-জনতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এ দাবিতে ঐক্যমত্য পোষণ করেছে।

সাবেক এই উপমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের সাড়া জাগানো আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকার প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নির্দেশনায় পাওয়ার চায়নার সঙ্গে এমইও চুক্তি নতুন করে নবায়িত হয়। সরকার প্রধানের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কর্মপ্রয়াসে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদীর কাউনিয়া রেলসেতু পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিস্তা গণশুনানি। সেই গণশুনানিতে হাজারো মানুষ উপস্থিত থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত কথা মোতাবেক ইতোমধ্যে পাওয়ার চায়নার সঙ্গে পাঁচ জেলায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা, চীনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ে অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আমরাও সুচিন্তিত মতামত দিয়েছি।

বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। আমরা আর কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, এখন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজের শুরু দেখতে চাই। এটা আমাদের ২ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি। এ দাবি আদায়ে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন আগামী ৫, ৯ এবং ১৬ অক্টোবর পদযাত্রা, স্মারকলিপি প্রদান, গণমিছিল, গণসমাবেশ এবং মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করবে।

এ সময় তিনি তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামী ৫ অক্টোবর রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় পদযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। ৯ অক্টোবর উপজেলা পর্যায়ে গগণমিছিলসহ গণসমাবেশ এবং ১৬ অক্টোবর ১০টি উপজেলা নদী-তীরবর্তী ১১টি স্থানে একযোগে মশাল প্রজ্জ্বলন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৫ হাজার ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তার কর্মবিরতি ঘোষণা Oct 03, 2025
img
ধর্ম ব্যবসায়ী একটি দল নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে : মির্জা আব্বাস Oct 03, 2025
img
ইয়ামালকে নিয়েই দল ঘোষণা স্পেনের, বাদ পড়লেন মোরাতা Oct 03, 2025
img
এক কাতারে, এক কিবলার দিকে এবং এক নেতৃত্বের অধীনে এগোতে হবে Oct 03, 2025
img
‘সোলজার’ সিনেমার ফটো শুটে অংশ নিলেন শাকিব-তিশা! Oct 03, 2025
img
প্রায় ৫০০ বছর পর ক্যান্টারবেরির প্রথম নারী হিসেবে আর্চবিশপ মনোনীত হলেন সারা Oct 03, 2025
img
রেকর্ড ভাঙতে পারে পপ তারকা টেলর সুইফটের নতুন অ্যালবাম Oct 03, 2025
img
বিএনপি বিশ্বাস করে গণতন্ত্র ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয় : জুয়েল Oct 03, 2025
img

ভারত সফর নিয়ে পুতিন

‘প্রিয় বন্ধু মোদির সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় আছি’ Oct 03, 2025
img
ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা মুসলিম দেশগুলোর নয়: পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী Oct 03, 2025
img
ইংল্যান্ড দলে ফিরলেন সাকা, বাদ পড়লেন বেলিংহ্যাম ও ফোডেন Oct 03, 2025
img
জাতিসংঘ সফরে ৬ সাফল্যের কথা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব Oct 03, 2025
img
এবার মাশরাফিকে নিয়ে মুখ খুললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা Oct 03, 2025
img
হামজাদের হংকং ম্যাচে কুয়েতের ৩ রেফারি Oct 03, 2025
img
আমরা অন্তত ১৬০টি আসন পাব: শিবির সেক্রেটারি Oct 03, 2025
img
‘গণভবন কখনোই সরকারিভাবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছিল না’ Oct 03, 2025
img
খাগড়াছড়িকে অশান্ত করার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার ভারতের Oct 03, 2025
img
জাতিসংঘে সভাপতির পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশকে ফিলিস্তিনের কৃতজ্ঞতা Oct 03, 2025
img
ভারত সফর নিয়ে ভক্তদের উদ্দেশে মেসির বার্তা Oct 03, 2025
img
মানচিত্র থেকে মুছে দেব: ভারতীয় সেনাপ্রধান Oct 03, 2025