আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কমিশন যদি ষড়যন্ত্র করে, তাহলে তাদের হুদা কমিশনের মতো পরিণতি হবে।’
শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের লোকমানপুর বাজারে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
অ্যাডভোকেট টিপু বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেনি।
শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেনি। বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা, জেল-জুলুম মাথায় নিয়ে রাজপথে থেকেছে, নির্যাতন সহ্য করেছে। এবারও যদি ষড়যন্ত্র হয়, তবে জনগণ তা প্রতিরোধ করবে। জনগণের রায় জনগণকে দিতেই হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি মহল দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ২০০৮ সালের মতো পরিকল্পিতভাবে কারচুপির ছক কাটা হচ্ছে। আমরা সেই অভিজ্ঞতা থেকে সতর্ক আছি। জনগণের রায় প্রতিফলিত না করলে, নির্বাচন কমিশনের হুদা কমিশনের মতো পরিণতি হবে।
প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা সীমিত করে দেওয়ার নীতির সমালোচনা করে টিপু বলেন, ‘আপনারা আইন করেছেন যাতে প্রার্থীরা পোস্টার ছাপাতে না পারেন, মিছিল-মিটিং করতে না পারেন। বিশটা বিলবোর্ড দিয়ে বিশাল নির্বাচনী এলাকায় কিছুই হবে না। পোস্টার মারা, মিছিল-মিটিং করা আমাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই এ আইন বাতিল করতে হবে।’ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির এ নেতা।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি দলের একটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রিজাইডিং অফিসার করার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এখনো নির্বাচনবিরোধী লোক বসে আছে। এরা বিগত দিনের নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করেছে। এবার তাদের সরাতে হবে। না হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে না।’
সরকারের সাম্প্রতিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকেও ষড়যন্ত্র আখ্যা দেন তাইফুল ইসলাম টিপু। তিনি বলেন, ‘এখন ৪ হাজার এসআই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো নিয়োগ দেওয়ার দরকার নেই। দ্রুত বিসিএসের মাধ্যমে নতুন কর্মকর্তাদের বসানো হচ্ছে, যাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হবে। এভাবে প্রশাসনকে হাতিয়ার বানিয়ে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এই নিয়োগ, এই খেলা বন্ধ করতে হবে।’
অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘জনগণের রায় প্রতিফলিত না করলে নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থেকে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। না হলে তাদের হুদা কমিশনের মতোই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।’
পথসভায় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দোয়া চান। গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় অংশ নেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে বুকে বুক মিলিয়ে হাতে হাত রেখে কুশল বিনিময় করেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা নয়ন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র শরিফুল ইসলাম লেলিন, পৌর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শামীম সরকারসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। টিপুকে ঘিরে নেতাকর্মীদের স্লোগানে পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
এবি/টিকে