মানুষ ধীরে ধীরে বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে জামালপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এনসিপির জেলা ও উপজেলা কমিটির সমন্বয় সভা শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে, বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ‘কিংস পার্টি’ বলে আখ্যায়িত করেন। গত ১২ অক্টোবর রাজধানীর গোপীবাগে সূত্রাপুর, ওয়ারী, বংশাল, কোতোয়ালী এবং গেন্ডারিয়া থানা শ্রমিক দলের এক সাংগঠনিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এনসিপির যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের ভক্ত ছিলাম। ভেবেছিলাম তারা বিপ্লবী দল হবেন। কিন্তু এখন তাদের মধ্যে ক্ষমতার অংশীদার কিংস পার্টির আচরণ দেখা যাচ্ছে। আগে আওয়ামী লীগ যেভাবে লুটপাট, টেন্ডারবাজি ও বদলিবাজিতে জড়িত ছিল, আজ এনসিপির একটি অংশও সে পথে হাঁটছে। আমি আশা করি, এনসিপি এইসব কর্মকাণ্ড থেকে সরে এসে সুস্থধারার রাজনীতিতে ফিরবে।
ইশরাক হোসেনের এ বক্তব্যের সমালোচনা করে সারজিস আলম বলেন, এই যে আমাদেরকে কিংস পার্টি বলার বিষয়টি- এর সঙ্গে আসলে কারা সবচেয়ে বেশি জড়িত? কারা সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত? কাদের ইমেজ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মানুষ ভালোভাবেই জানে। ধীরে ধীরে মানুষ কাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, সেটাও তারা বিচার করতে পারবে। আমি জানি না, কেন বারবার এসব শব্দ উঠে আসে।
তিনি আরও বলেন, ইশরাক ভাইয়ের নাম এলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে তার মরহুম পিতা, জনাব সাদেক হোসেন খোকার চেহারা। আমরা চাই, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকুক। ভিত্তিহীন অভিযোগ-আসক্ত রাজনীতি আমরা চাই না। ইশরাক ভাই যদি সত্যিই এমন কথা বলে থাকেন, যদিও বক্তব্যটি আমি শুনিনি তবে আশা করি, তিনিও বিষয়টি বিবেচনা করবেন। মিডিয়ার যারা আছেন, আপনারাও বিবেচনা করবেন। দেশের সাধারণ মানুষও এসব ভালো বোঝে।
বিএনপির জন্ম নিয়ে মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, যদি এনসিপিকে কিংস পার্টি বলা হয়, তাহলে বাস্তবতায় বিএনপিকে কিভাবে দেখা উচিত, সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে। বিএনপি কোন পরিস্থিতিতে জন্ম নিয়েছিল, কারা তখন ক্ষমতায় ছিল, তারা কীভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করেছে- এসব প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক। তবে এসব বিতর্কে না গিয়ে আমাদের সেই পথে চলা উচিত, যেটা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। ক্ষমতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া কিংবা একে অপরকে কাদা ছোড়াছুড়ি করে দোষারোপ করা পুরনো রাজনীতির ধারা আমরা চাই, রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় থাকুক।
তিনি আরও বলেন, জনগণ এখন যেসব সংস্কার চায়, যাদের বিচারের দাবি জানায়, সেই বিষয়ে আলোচনা হওয়া জরুরি। পাশাপাশি একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে সম্ভব- সে বিষয়ে আমাদের সরকার বা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা উচিত। কাদা ছোড়াছুড়ি বাদ দিয়ে গঠনমূলক আলোচনায় মনোযোগ দিই।
এ সময় এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও জামালপুর জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী লুৎফর রহমান, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হিফজুর রহমান বকুলসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভার আগে তিনি জামালপুর জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতাদের সাথে সমন্বয় সভায় অংশ নেন।
ইউটি/টিএ