জুলাই গণহত্যা

হাসিনা-কামাল-মামুনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্কের চতুর্থ দিন আজ

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চতুর্থ দিনের মতো চলছে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক বা আর্গুমেন্ট উপস্থাপন।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১২টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।

গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো দিনভর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। এদিন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু, শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনসহ কয়েকটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনানো হয়। একইসঙ্গে এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষীর বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়।

এর আগে, ১৩ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। ওই দিন বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যা এ মামলার বিচারকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। ওই দিন দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলের ইতিহাস তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। একইসঙ্গে গুম-খুনসহ নারকীয় সব ঘটনার বর্ণনা দেন। আর এসব বিবরণ এ মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম।

গত ৮ অক্টোবর মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা শেষ করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এরপর যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

সবমিলিয়ে মোট ২৮ কার্যদিবসে এ মামলায় ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ৭ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা শেষ করেন আমির হোসেন। ৬ অক্টোবর এ জেরা শুরু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। তিনি এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম বা সর্বশেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড ও ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। সেদিনও বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি নিজের জব্দ করা জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা নিয়ে দেশের একটি গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয় ট্রাইব্যুনালে। এছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। এমনকি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন তিনি।

২৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরের জবানবন্দি শুরু হয়। ওই দিন তার জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। এসব ভিডিওতে জুলাই-আগস্টের নির্মমতা ফুটে ওঠে। ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন আমির হোসেন।

মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজের দায় স্বীকার করে আগেই হয়েছেন রাজসাক্ষী। এছাড়া সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

টিজে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৩০ হাজার কোটির সম্পত্তির দলিলে ছেলের নাম ভুল, চাঞ্চল্য কারিশমা পরিবারে Oct 15, 2025
img
সালমানের মতো ক্রিমিনাল কেন জওয়ানে-প্রশ্ন তুললেন পরিচালক Oct 15, 2025
img
নির্বাচনের আগেই পেশিশক্তির ব্যবহার শুরু হয় গেছে: শামীম সাঈদী Oct 15, 2025
img
ব্যাট ছুড়ে শাস্তি পেলেন আফগানিস্তানের ব্যাটার Oct 15, 2025
img
পাকিস্তান-আফগানিস্তানের ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা Oct 15, 2025
img
রাতে হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া Oct 15, 2025
img
অক্ষয় কুমার নেই 'সংক্রান্তিকি বস্তুনামের' হিন্দি রিমেকে Oct 15, 2025
img
শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক তবে বিশৃঙ্খলা করতে ফান্ড দিচ্ছে আ. লীগ : সেলিম ভূঁইয়া Oct 15, 2025
img
জুলাই সনদ নিয়ে বেকায়দায় ড. ইউনূস: মোস্তফা ফিরোজ Oct 15, 2025
img
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার Oct 15, 2025
img
অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ইতালি : প্রধান উপদেষ্টা Oct 15, 2025
img
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল নেপাল ও ওমান Oct 15, 2025
img
শিক্ষকদের বেতন সর্বোচ্চ হওয়া উচিত : নুরুল হক নুর Oct 15, 2025
img
উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে: প্রধান উপদেষ্টা Oct 15, 2025
img
বিসিবির পরে এবার অলিম্পিক কমিটির নির্বাচনের প্রস্তুতি Oct 15, 2025
img
ইধিকা কবে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন? Oct 15, 2025
img
রাজধানীতে ‘লালন’ ব্যান্ডের কনসার্ট Oct 15, 2025
img
‘উপদেষ্টাদের কল রেকর্ড কীভাবে পেলেন জামায়াত নেতা?’ Oct 15, 2025
img
মিরপুরের আগুন নিয়ে আহমাদুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট Oct 15, 2025
img
এনসিপিকে শাপলার 'কলি' দিতে বললেন রাশেদ খান Oct 15, 2025