বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) স্পট মার্কেটে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ২০০ ডলার ছাড়িয়েছে যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
মার্কিন সুদের হার কমতে পারে এমন প্রত্যাশা এবং নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন।
লন্ডন সময় সকাল ৬টা ৫৯ মিনিটে স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ২০০ দশমিক ১১ ডলার। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২১৮ ডলারে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আংশিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ফেডারেল রিজার্ভের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ‘সহনশীল নীতি’ মন্তব্য, সোনার দামে নতুন গতি এনে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত।
স্টোনএক্সের সিনিয়র বিশ্লেষক ম্যাট সিম্পসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কার্যক্রম বন্ধ থাকা ও জেরোম পাওয়েলের নরম সুরের মন্তব্য সোনার দামের দ্রুত বৃদ্ধির সর্বশেষ কারণ।
ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার এখনো দুর্বল অবস্থায় আছে, যদিও অর্থনীতি ‘প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা ভালো পথে রয়েছে’। তিনি আরও জানান, সুদের হার নির্ধারণ এখন ‘মিটিং-ভিত্তিক’ সিদ্ধান্ত হবে, যেখানে শ্রমবাজারের দুর্বলতা ও লক্ষ্য ছাড়ানো মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে।
বিনিয়োগকারীরা এখন প্রায় নিশ্চিত যে অক্টোবর ও ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডের পক্ষ থেকে অন্তত ০.২৫ শতাংশ (২৫ বেসিস পয়েন্ট) সুদের হার কমানো হবে। কম সুদের পরিবেশে সাধারণত সোনা ভালো করে, কারণ এতে ধরে রাখার খরচ কমে যায়।
নিরাপদ আশ্রয়ের এই ধাতুটি এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্থানের পেছনে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন সুদ কমানোর প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রেকর্ড পরিমাণ ক্রয়, ‘ডি-ডলারাইজেশন’ প্রবণতা এবং এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) থেকে শক্তিশালী বিনিয়োগ প্রবাহ সবকিছুই ভূমিকা রেখেছে।
সিম্পসনের ভাষায়, ‘এই দৌড় এখন অনেকটাই ‘‘মোমেন্টাম ট্রেড’’ বিনিয়োগকারীরা দাম আরও বাড়বে ভেবে স্বর্ণের বাজারে ঢুকছেন।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ফেডারেল সরকারের বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে যেসব ‘ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রাম’ বন্ধ থাকবে তার তালিকা শুক্রবার প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, চীনের সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশেষ করে রান্নার তেলের মতো পণ্যক্ষেত্রে কেটে ফেলার বিষয়টি বিবেচনায় আছে।
দুই দেশের মধ্যে মঙ্গলবার থেকে পাল্টাপাল্টি বন্দর শুল্ক আরোপ শুরু হয়েছে, যা নতুন করে বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িয়েছে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা আবারও বাড়লে সেই প্রবৃদ্ধি ধীর হতে পারে।
স্বর্ণের পাশাপাশি রুপার দামও রেকর্ড গড়েছে। মঙ্গলবার রুপার দাম আউন্সপ্রতি ৫৩ দশমিক ৬০ ডলারে পৌঁছানোর পর বুধবার ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৪৮ ডলারে।
সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে রুপার বাজারেও চাপ বাড়ছে।
এছাড়া প্লাটিনামের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৬৫ ডলার। প্যালাডিয়ামের দাম ০.৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৭৫ ডলারে।
এমকে/এসএন