আগে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন, তারপরে তো আইনি ভিত্তি : এনসিপির উদ্দেশে মাসুদ কামাল

আইনি ভিত্তি না দিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, এনসিপি শুক্রবার স্বাক্ষর করতে যাবে না। কেন যাবে না? তাদের দুটো কথা। একটা হলো যে এটাকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে, এটাকে আইনি ভিত্তি না দিলে তারা যাবে না।

আরে ভাই, আইনি ভিত্তিটা তো আপনি আগে স্বাক্ষর করবেন, তারপরে আইনি ভিত্তি। স্বাক্ষরের আগে আইনি ভিত্তি চাচ্ছেন আপনি?

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি। টেক্সট আগে পাওয়ার জন্য যে দাবি এনসিপি করেছে, এটা যৌক্তিক মনে করেন তিনি।

মাসুদ কামাল বলেন, বহুল আলোচিত এবং বহুল চর্চিত জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ কি হতে যাচ্ছে সেটা নিয়ে আমার মনে অন্ততপক্ষে দ্বিধা আছে।

এ নিয়ে গবেষণা কম হয়নি। সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে একাধিক। প্রথমে ছয়টা, পরে আরো পাঁচটা- অনেক কিছু করা হলো। তারপর সেখান থেকে প্রথম ছয়টার রিপোর্টকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হলো।

সেখানে রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে নিয়মিত যেতে হতো। অনেকটা রিমান্ডে নেওয়ার মত তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা, সারাদিন বসিয়ে রেখে কথাবার্তা- কত কিছু হয়েছে। তারপর কেউ কেউ নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছেন, অমুক দিয়েছেন, তমুক দিয়েছেন- সবকিছুর পর আগামীকাল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এই জুলাই সনদে সব রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে এবং এটার ব্যাপারে তখন (স্বাক্ষর হয়ে গেলে) বলা হবে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত একটা সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কাকে বলে? যার সঙ্গে পুরো জাতি একত্রিত থাকে, পুরো জাতি ঐকমত্য গঠন করে। তেমন কিছু হয়েছে? জাতির কত অংশ এখানে আছে? কতগুলো রাজনৈতিক দল একসঙ্গে হলো এটা গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হলো- পুরো জাতি কি কেবল রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে গঠিত? এই রাজনৈতিক দলের বাইরে কি আর জাতি নেই? আর যদি আমি রাজনৈতিক দল ধরি, এ রাজনৈতিক দলই সব? অনেক রাজনৈতিক দলকে এখানে ডাকা হয়নি।

কারণ তাদেরকে এরা জাতিই মনে করে না। জাতির অংশই মনে করে না।

তিনি বলেন, ঠিক আছে। তারপরও যেটা করেছেন, সবশেষ মিলিয়ে ৮৪টা পয়েন্টে আপনারা একমত হয়েছেন। অনেকগুলোতে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দিয়েছেন। তারপর সেটাও তো স্বাক্ষর করতে আসছে না! সবচেয়ে কম যে দলটা ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা মাত্র একটা ইস্যুতে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দিয়েছে। আর সবগুলো ইস্যুতে তারা একমত ছিল। সেই এনসিপিও কালকে স্বাক্ষর করতে যাবে না। কেন যাবে না? তাদের দুটো কথা। একটা হলো যে এটাকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে, এটাকে আইনি ভিত্তি না দিলে তারা যাবে না। আরে ভাই, আইনি ভিত্তিটা তো আপনি আগে স্বাক্ষর করবেন, তারপরে তো আইনি ভিত্তি।

স্বাক্ষরের আগে আইনি ভিত্তি চাচ্ছেন আপনি? আচ্ছা, ঠিক আছে, আইনি ভিত্তি কে দেবে? আপনি আইন যে বলছেন, সকল আইনের ঊর্ধ্বে আইন কোনটা দেশের? পৃথিবীর যেকোনো দেশে জিজ্ঞাসা করেন যে সবচেয়ে বড় আইন কোনটা? সবচেয়ে বড় আইন হলো সেই দেশের সংবিধান। আপনারা তো সংবিধানই মানেন না। তাহলে আইনি ভিত্তিটা কে দেবে? সরকার দেবে? এই সরকার তো নিজেই বলেছে তারা সাংবিধানিক সরকার। যে সরকার সংবিধানকে মান্য করে গঠিত হয়েছে, সেই সরকার কীভাবে সংবিধানের বাইরে গিয়ে একটা ঘোষণাপত্রকে, একটা সনদকে আইনি ভিত্তি দেবে? কীভাবে দেবে?

তিনি আরো বলেন, এই জুলাই ঘোষণাপত্রে সংবিধানের অনেক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সেই পরিবর্তনগুলো আপনি কীভাবে করবেন? সর্বোচ্চ আইনকে কি একটা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে গঠিত একটা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে অমান্য করা যাবে? তাহলে কি দুটো সংবিধান থাকবে দেশে? একটা ‘সংবিধান’, একটা ‘দ্বিতীয় সংবিধান’? মানে একটা প্রথম শ্রেণির সংবিধান, একটা দ্বিতীয় শ্রেণির সংবিধান- কোনটা উপরে থাকবে? জুলাই সনদ উপরে থাকবে? মানে একটা জগাখিচুড়ি চূড়ান্ত। তাদের আরেকটা কথা হলো যে আমাদেরকে পুরো টেক্সট দেওয়া হয়নি। কেন টেক্সট দেওয়া হয়নি? এটা আমি পয়েন্টটাকে খুব ভ্যালিড মনে করি যে তারা যে সমস্ত বিষয়ে ঐকমত্য করেছে, সেগুলোকে নিয়ে গিয়ে সনদটা তৈরি করবে।

এই যে তৈরি করবে কেউ একজন, কেউ লিখবে, কে লিখেছে? এই লেখক কে? সে দেশের বিখ্যাত লেখক কোনো? সে লেখক কি লিখেছে? এটা যদি এনসিপি দেখতে চায় যে আমরা টেক্সটাকে আগে দেখতে চাই, আমি তাতে কোনো অন্যায় দেখি না। সেটা এনসিপিকে দেখানো হচ্ছে না কেন? বিশাল একটা সনদ বানানো হবে। সবাইর কাছে নিয়ে আসবে, সবাই সাইন করেন, সবাই সাইন করবে, কিন্তু এখানে আছেটা কি? এটা পড়তে হবে না? এনসিপির এই দাবিটা যে একদম যৌক্তিক। মানে টেক্সট আগে পাওয়ার জন্য যে দাবিটা এনসিপি করেছে এটা একদম যৌক্তিক। তাদের এ দাবির বিষয়টা আমরা জানতে পারছি বাম কয়েকটা দলের প্রেস কনফারেন্স থেকে।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে এনসিপি রাজনীতি থেকে ছিটকে যায়নি : নাহিদ ইসলাম Oct 18, 2025
img
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, অঙ্কনের অভিষেক Oct 18, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় তিন বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস Oct 18, 2025
img
‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের মাইলফলক: ইইউ রাষ্ট্রদূত Oct 18, 2025
img
বোরকা নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে পর্তুগাল Oct 18, 2025
img
পরাজিত শক্তির ন্যারেটিভে সনদ বানচাল করতে চাইলে দেশ পিছিয়ে পড়বে : অ্যাটর্নি জেনারেল Oct 18, 2025
img
শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত বিএনপি : মির্জা ফখরুল Oct 18, 2025
img
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হয়েছে : সালাহউদ্দিন আহমদ Oct 18, 2025
img
১০৩ বছর বয়সে চলে গেলেন নোবেল বিজয়ী চেন নিং ইয়াং Oct 18, 2025
img
আবারও পাকিস্তান ক্রিকেটে নেতৃত্ব পরিবর্তনের গুঞ্জন Oct 18, 2025
img
আড্ডায় শাহরুখ, সালমান ও আমিরের বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ Oct 18, 2025
img
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: সেরা রান সংগ্রাহক সম্পর্কে ক্লার্কের ভবিষ্যদ্বাণী Oct 18, 2025
img
আমার মনে হয় শাকিব খানের কিছু বলা উচিত ছিল : জাহিদ হাসান Oct 18, 2025
img
শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত : তারেক রহমান Oct 18, 2025
img
পাসপোর্ট ফিরে পেলেন অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী Oct 18, 2025
img
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াল কাবুল ও ইসলামাবাদ Oct 18, 2025
img
লালপুরে একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন বাবা-মেয়ে Oct 18, 2025
img
জুলাইযোদ্ধাদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেন নুর Oct 18, 2025
img
রাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানালেন ছাত্রদলের ভিপি-এজিএস প্রার্থী Oct 18, 2025
img
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে সিরিজ : পরিসংখ্যানে কারা এগিয়ে Oct 18, 2025