প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিদেশি কারখানায় লাগা আগুন। ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর ২৩ ইউনিটের যৌথ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ততক্ষণে পুড়ে কঙ্কাল হয়েছে আটতলা ভবন। ধসে পড়েছে বিভিন্ন অংশ। তবে কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। স্ট্রাকচার দুর্বল হয়ে পড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে ভবনটি। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস এবং ইপিজেড কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
দাউদাউ করে জ্বলেছে আগুন। এ যেন তার পূর্ণ ক্ষমতার উন্মোচন। যেখানে বাতাস আর রাসায়নিক পদার্থ সেবক হয়ে আগুনকে করেছে আরও তীব্র, আরও উদ্দাম। যার দহনে পুড়ে কঙ্কাল আটতলা ভবন।
এ দৃশ্য চট্টগ্রাম ইপিজেডের অ্যাডাম ক্যাপস এন্ড টেক্সটাইল ও জি হং কারখানার। গতকাল (বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর) দুপুর ২টায় ভবনের সাততলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। ভবনটিতে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও দাহ্য পদার্থ পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।
ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর ২৩টি ইউনিটের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্যবহার করা হয় রোবটসহ অত্যাধুনিক দুটি ক্রেন। ততক্ষণে পুরো ভবনটি পুড়ে কঙ্কাল। আগুনের তাপমাত্রা ৮০০ থেকে এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার ধসে পড়ে ভবনের ছাদসহ বেশ কিছু অংশ। ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘দুই দিক থেকে এটা খোলা, কিন্তু বাকি দুই দিক বিল্ডিং কোডের নিয়ম মেনে করা হয়নি। কারণ পাশের যে ভবনটি ছিল তা খুবই সন্নিকটে। এটা খোলা ছিল না, যার কারণে আমাদের ফায়ার ফাইটাররা ওখানে পজিশন নিতে পারেনি। কটু দূরে দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের সেফটি এনসিউর করে আমরা এ কার্যক্রম করেছি। যার কারণে সময় লেগেছে। তবে আমাদের কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাকসেস বলবো আমরা।’
এদিকে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যদিও ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বেপজা। ঘটনার সময় কারখানাটিতে এক হাজারের বেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তা অবস্থান করছিল। কর্তৃপক্ষের সাবধানতায় কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি দাবি ইপিজেড কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘প্রথম আমাদের যে প্রচেষ্টা ছিল, এরিয়াটাকে করডোন করে আমাদের শ্রমিক ভাইবোনদের নিরাপদে সুস্থভাবে বের করে নিয়ে আসা। সেটা আমরা সক্ষম হয়েছি।’
ইপিজেড বা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় আগুন অর্থনীতিতে বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর এরকম বিদেশি মালিকানাধীন কারখানায় আগুন দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করে। যেহেতু এ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতি বৃদ্ধি করছে তাই এ অঞ্চলে কারখানার নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ উন্নত করার পরামর্শ সচেতন মহলের।
এসএন