পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ভারতকে সতর্ক করে বলেছেন, পারমাণবিক পরিবেশে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের কোনো সুযোগ নেই। তবে যেকোনো উসকানিতে মাতৃভূমির প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) পিএমএ কাকুলে অনুষ্ঠিত ১৫২তম পাকিস্তান সামরিক অ্যাকাডেমি লং কোর্স, ৩৭তম টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েট কোর্স, ৭১তম ইন্টিগ্রেটেড কোর্স এবং ২৬তম লেডি ক্যাডেট কোর্সের ক্যাডেটদের পাসিং-আউট প্যারেডে ভাষণ দেওয়ার সময় মুনির বলেন, জাতি এবং সামরিক বাহিনী পূর্ণ সমর্থনের সাথে মাতৃভূমির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রতিরক্ষায় কোনো কসুর করেনি।
ফিল্ড মার্শাল প্যারেডে বিশিষ্ট ক্যাডেটদের পুরস্কার প্রদান করেন। ১৫২তম পিএমএ লং কোর্সের অ্যাকাডেমি সিনিয়র আন্ডার অফিসার আহমেদ মুজতবা আরিফ রাজা মর্যাদাপূর্ণ সোর্ড অফ অনার লাভ করেন।
১৫২তম পিএমএ লং কোর্সের ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার জোহাইর হুসেন পান প্রেসিডেন্টস গোল্ড মেডেল। ১৫২তম পিএমএ লং কোর্সের ফ্রেন্ডলি কান্ট্রি কোম্পানির জুনিয়র আন্ডার অফিসার তেকরাজে-কে দেওয়া হয় চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটি ওভারসিজ গোল্ড মেডেল।
১৫২তম পিএমএ লং কোর্সের জেন্টলম্যান ক্যাডেট সৈয়দ হাশির হাসান পান চিফ অফ আর্মি স্টাফ মার্কসম্যান মেডেল। ৩৭তম টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েট কোর্সের কোর্স আন্ডার অফিসার শাহীর আলী পান চিফ অফ আর্মি স্টাফ কেন।
২৬তম লেডি ক্যাডেট কোর্সের কোর্স স্পোর্টস সার্জেন্ট মোস্ত জান্নাতুল মাওয়া লাভ করেন কমান্ড্যান্টস ওভারসিজ মেডেল। ৭১তম ইন্টিগ্রেটেড কোর্সের কোর্স আন্ডার অফিসার সৈয়দ আবদুল হাদী এবং ২৬তম লেডি ক্যাডেট কোর্সের কোর্স আন্ডার অফিসার হাদিয়া ফাইয়াজ পান কমান্ড্যান্টস কেন।
তিনি বলেন, "আমি বাংলাদেশ, ইরাক, মালি, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, নেপাল, প্যালেস্টাইন, কাতার, শ্রীলঙ্কা এবং ইয়েমেনের ক্যাডেটদের এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।"
ইরাক, প্যালেস্টাইন, কাতার, মালি, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেন, বাংলাদেশ এবং নাইজেরিয়া সহ একাধিক বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের ৪০ জন ক্যাডেট পাকিস্তান সামরিক অ্যাকাডেমি থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি জাতিকে আশ্বাস দিচ্ছি যে, ইনশাআল্লাহ, আমরা এই পবিত্র ভূমির এক ইঞ্চিও শত্রুর কাছে সমর্পণ হতে দেব না।”
আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং হুঁশিয়ারি
সাম্প্রতিক আঞ্চলিক উত্তেজনার কথা উল্লেখ করে ফিল্ড মার্শাল মুনির বলেন, “পারমাণবিক পরিবেশে যুদ্ধের কোনো সুযোগ নেই এবং ভারতকে সতর্ক করে বলেন, তাদের আগ্রাসী মনোভাব এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি আরও যোগ করেন,শত্রুদের 'ভাড়াকৃত সৈনিক' হিসেবে ফিতনা আল-হিন্দুস্তান এবং ফিতনা আল-খাওয়ারিজ-এর ব্যবহার বিশ্বের সামনে তাদের ভীরুতা, কপটতা এবং জঘন্য চেহারা প্রকাশ করে।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর সাথে সম্পর্কিত সন্ত্রাসীদের জন্য "ফিতনা আল-খাওয়ারিজ" শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর "ফিতনা আল-হিন্দুস্তান" বলতে ভারত-সমর্থিত চরমপন্থী প্রক্সিগুলিকে বোঝায়। মুনির বলেন, উভয়ই শান্তির জন্য হুমকি এবং তাদের দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান, মারকা-ই-হক এবং বুনইয়ানুম মারসুস, পেশাগত দক্ষতা ও সংকল্পের মাধ্যমে শত্রুকে পরাজিত করে জাতীয় আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী বহু শত্রুর ঘাঁটি, এমনকি এস-৪০০ সিস্টেমও ধ্বংস করেছে, যা পাকিস্তানের মাল্টি-ডোমেন যুদ্ধ সক্ষমতা প্রদর্শন করে।
ফিল্ড মার্শাল মুনির মে ২০২৫ সালে ভারতের সাথে সংঘটিত সংঘর্ষে পাকিস্তানের বিজয়কে একটি "নির্ণায়ক" মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মান অর্জন করেছে। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে "মনগড়া প্রমাণ" উপস্থাপনের এবং ঘরোয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসবাদকে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন।
কাশ্মীরে ভারতীয় রাষ্ট্র-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বিরোধের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং নৈতিক সমর্থন দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানান, যা হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন, এবং জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী করে প্রাক-১৯৬৭ সীমান্তের ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি পাকিস্তানের অটল সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
ভাষণের উপসংহারে ফিল্ড মার্শাল মুনির পাকিস্তানের সৈনিক, নাগরিক এবং সর্বস্তরের পেশাদারদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, দেশের শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতায় তাদের অবদানের কথা স্বীকার করেন।
এমকে/টিএ