কিছু বিষয়ে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে : আসিফ নজরুল

আজকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কিছু বিষয়ে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তার আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ একদিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় প্রায় জামিন দিয়েছেন। জামিন উনি দিতেই পারেন কিন্তু চার-পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব? এটা কি আসলে বিচারিক বিবেচনা ছিল কিনা— এ রকম আরো কিছু কিছু প্রসঙ্গ উঠেছে। আমাদের মনে হয়, গোটা বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আইনটা চূড়ান্ত করার পদক্ষেপ নিতে পারব।

তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫, এটা নিয়ে বোধহয় আমরা ২৫-৩০ বছর যাবৎ কথা বলছি। এটা ২০০৬ সালের দিকে খুব ভালোভাবে একটা চেষ্টাও করা হয়েছে। চেষ্টাও হয়েছিল আইনটা করার। কোনোভাবেই করা যাচ্ছিল না কিন্তু আপনারা জানেন, আমাদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আছে, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন আছে, সংস্কারের রোডম্যাপ আছে, সব জায়গায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। আমরা এই আইনটা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি।

আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটা যখন চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে যাবে, তখন আদালতের যারা বিচারক আছেন, তাদের বদলি-পদায়ন-পদোন্নতি, তাদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব ব্যাপার, সবকিছু সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। আর সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব বাজেট ব্যবস্থাপনা থাকবে। তাদের সম্পত্তি, তাদের কী কী খাতে তারা উন্নয়ন করবে, কী কী পদ সৃজন করবে— এই সমস্ত ব্যাপারে তাদের একটা আর্থিক স্বাধীনতা থাকবে। এটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে কিছু কিছু বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে যেহেতু এটার সাথে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। অবশ্যই অর্থ উপদেষ্টার একটা মতামতের প্রয়োজন রয়েছে। আইনটা করার সময় সেই মতামতটা নেওয়া হয় নাই। জনপ্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি সেটা হচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর অধ্যাদেশ। গণভবনের জায়গায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে আমাদের যেই তরুণরা প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের চিরস্থায়ী অঙ্গহানি হয়েছে, আমাদের যে অপূরণীয় আত্মত্যাগের ঘটনা আছে, আর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে পতনের একটা স্মারক হিসেবে স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা গণভবনে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর করছি। এটা আমরা একটা আলাদা জাদুঘর হিসেবে স্থাপন করতে চাই। সেখানে লোকবল লাগবে, আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে, সেজন্য আরও একটু আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এটাও আমরা খুব দ্রুত চেষ্টা করব। খুব দ্রুত এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করার জন্য মোটামুটি আইনগত ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আরেকটা আইন যেটা নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে, সেটা হচ্ছে দুদক অধ্যাদেশ (দুদক অর্ডিনান্স)। সেখানে কিছু কিছু বিধান করা হয়েছে। বাংলাদেশে যারা থাকবে— বাংলাদেশি হোক বা বিদেশি হোক, বাংলাদেশের অবস্থানকালে অন্যদেশে যদি কোনো দুর্নীতি করে, সেটার বিচারও দুদকের মাধ্যমে, সেটার তদন্তও দুদকের মাধ্যমে করা যাবে। আর ওখানে জ্ঞাত আয়ের সংজ্ঞাতে বলা হচ্ছে, জ্ঞাত আয় মানে বৈধ আয়। জ্ঞাত আয় মানে অবৈধ আয় নয়। এগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশের যে জায়গায় দুদকের অফিস থাকবে, সেখানেই দুদকের স্পেশাল কোর্ট গঠন করার বিধান করা হয়েছে। দুদকের যারা চেয়ারম্যান থাকবেন বা দুদকের যিনি প্রধান থাকবেন, তাদের বাছাই করার জন্য সাত সদস্যের বাছাই কমিটি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে তা হবে। এবং তারা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করবে। তাছাড়া তারা নিজেরাও প্রার্থী বাছাই করবে। কমিশনের যে কার্যাবলি দুদকের, সেটার কার্যাবলি বাড়ানো হয়েছে। ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এজাহার দায়ের, তদন্ত, অনুসন্ধানের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুদকের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা প্রয়োজন রয়েছে। দুদকের কাজ দুর্নীতি দমন করা। কিন্তু দুদকের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এইটা আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি এবং বলেছি যে, আজকে আমরা এটা নীতিগতভাবে অনুমোদন করলাম। আইনটা চূড়ান্ত করার আগে দুদকের যে অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার পদ্ধতি, সেটাকে আরও অনেক শক্তিশালী করতে হবে। এগুলোর বাইরে আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এনসিপি থেকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগ! Oct 24, 2025
img
বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে লড়াই হবে, আমরা ভাই-ভাই: জয়নুল আবদিন Oct 24, 2025
img

৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রত্যাশীরা

মধ্যরাতে এনসিপির কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ Oct 24, 2025
img
বগুড়ায় বিএনপির ৩৩ নেতাকর্মীর জামায়াতে যোগদান Oct 24, 2025
img
সব সিদ্ধান্ত সালাহউদ্দিন স্যার নেন না: মিরাজ Oct 24, 2025
img
১২ লাখ টাকায় হত্যা করা হয়েছিল সালমান শাহকে, মুখ খুললেন আসামি Oct 24, 2025
img
চমক রেখে দল ঘোষণা করল দক্ষিণ আফ্রিকা Oct 24, 2025
img
নির্বাচনী কাজে নিয়োজিতরা এবার ভোট দিতে পারবেন: আইন উপদেষ্টা Oct 24, 2025
img
বাংলাদেশে কোরিয়ান বিনিয়োগ বাড়াতে চূড়ান্তের পথে সিইপিএ চুক্তি Oct 24, 2025
img
সরিয়ে দেওয়া হলো নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে Oct 24, 2025
img
ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো অভিবাসী ফের নৌকায় চড়ে যুক্তরাজ্যে Oct 23, 2025
img
জাতীয় স্টেডিয়ামে একই দিনে আরচ্যারি ও হামজাদের ম্যাচ Oct 23, 2025
img
রশিদ খানকে টপকে রিশাদের বিশ্বরেকর্ড Oct 23, 2025
img
শপথ নিলেন রোহিঙ্গাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা Oct 23, 2025
তামিম-মাশরাফি ভাই আমাকে সাপোর্ট করেছেন, আমার সামনে ভালো সময় আসবে: মিরাজ Oct 23, 2025
প্রেম নিয়ে প্রথমবারের মতো খোলাখুলি সাদিয়া আয়মান Oct 23, 2025
চরফ্যাশনে ৩ শতাধিক দুস্থ ও অসহায় মানুষ পেল বিএনপির উপহার Oct 23, 2025
নির্বাচনে যেকোনো অপশক্তি মোকাবিলায় পুলিশ সক্ষম: ডিএমপি কমিশনার Oct 23, 2025
ঢাবি এলাকায় অভিযান শুরুর আগেই দোকান নিয়ে চম্পট অবৈধ দোকানদাররা Oct 23, 2025
নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির Oct 23, 2025