বতসোয়ানায় খনি শ্রমিকরা একটি বিরল দুই রঙের প্রাকৃতিক হীরা আবিষ্কার করেছেন। হীরাটি অর্ধেক গোলাপী, অর্ধেক বর্ণহীন। ক্যালিফোর্নিয়ার জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট পরিচালিত একটি গবেষণা কেন্দ্র বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি অসাধারণ এই হীরা পরীক্ষা করেছেন।
গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, এর পরিমাপ প্রায় ১ বাই ০.৬৩ বাই ০.৫৭ ইঞ্চি (২৪.৩ বাই ১৬ বাই ১৪.৫ মিলিমিটার)। আর এর ওজন ৩৭.৪১ ক্যারেট (০.২৫ আউন্স বা ৭.৫ গ্রাম)।
জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের হীরা সনাক্তকরণের সিনিয়র ম্যানেজার স্যালি ইটন-মাগানা লাইভ সায়েন্সকে বলেন, গোলাপী অংশটি সম্ভবত প্রথমে বর্ণহীন ছিল এবং পরে নতুন রূপ পেয়েছিল। সম্ভবত লাখ লাখ বছর আগে পাহাড় সৃষ্টির কোনো ঘটনার ফলে এর গোলাপী রঙ হয়েছিল। আর বর্ণহীন অংশটি পরবর্তী সময়ে তৈরি হয়েছিল।
গোলাপী হীরা অবিশ্বাস্যরকম বিরল। এটি কীভাবে তৈরি হয়, তা এখনো স্পষ্ট নয়। হীরার উৎপত্তি পৃথিবীর পৃষ্ঠের ১০০ মাইলেরও বেশি নিচে 'ম্যান্টল' নামক একটি গ্রহীয় স্তরের ভেতরে।
অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপ কার্বন পরমাণুগুলোকে একত্রে একটি শক্ত জালিতে আবদ্ধ করে। এই কাঠামোটি আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে দ্রুত ভূপৃষ্ঠে উঠে যেতে পারে, যা রুক্ষ হীরা আঁকারে পাওয়া যায়। শক্ত জালির ভেতরে আটকে থাকা অমেধ্যের মাধ্যমে হীরা পৃথক রঙ ধারণ করতে পারে।
গোলাপী হীরা মূলত কাঠামোগত বিকৃতির ফসল, অর্থাৎ ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের জালির কাঠামো বাঁকানো বা সংকুচিত হলে এটি ঘটে থাকে। হীরা গোলাপী হওয়ার জন্য তাপমাত্রা ও চাপের অবস্থা ঠিক থাকা দরকার, কেননা অত্যধিক বিকৃতি রত্নগুলোকে বাদামী করে তোলে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র গবেষণা ভূতত্ত্ববিদ লুক ডুসেট লাইভ সায়েন্সকে বলেন, পৃথিবীতে প্রচুর বাদামী হীরা আছে। তবে খুব, খুব কম গোলাপী হীরা পাওয়া যায়।
নতুন হীরাটি আবিষ্কৃত প্রথম গোলাপী-বর্ণহীন প্রাকৃতিক হীরা নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তারা যে ধরণের গোলাপী হীরা পরীক্ষা করেছেন, সেগুলো অনেক ছোট ছিল - যার ওজন ২ ক্যারেটের বেশি ছিল না।
নতুন আবিষ্কারটি বতসোয়ানার কারোও খনি থেকে এসেছে। সেখানে পূর্বে অন্যান্য দর্শনীয় হীরা পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ, এখানেই দ্বিতীয় বৃহত্তম রুক্ষ হীরা পাওয়া যায় - বিশাল ২৪৮৮ ক্যারেটের। এছাড়া এখান থেকেই 'মোটসওয়েডি' নামের একটি হীরা পাওয়া যাছে, যার ওজন ৬২ ক্যারেট। এখান থেকেই 'বোইতুমেলো' নামের একটি ছোট গোলাপী হীরা আবিষ্কৃত হয়েছে।
টিজে/টিকে