কবরস্থান তাদের একমাত্র থাকার জায়গা

গাজার হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ এখন কবরস্থানে তাঁবু ফেলছেন। তাদের ঘরবাড়ি নেই বা ফেরার মতো অন্য কোনো আশ্রয়ও নেই। ইসরায়েলি হামলায় গাজাজুড়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর কবরস্থানগুলোই হয়ে উঠেছে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল। যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর হলেও মানবিক বিপর্যয় এখনো ভয়াবহ।

আলজাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর থেকে জানিয়েছেন, ‘এই কবরস্থান জীবিতদের জন্য নয়; কিন্তু আজ এখানে বসবাস করছে বহু পরিবার, যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ এখানে তাঁবু ফেলছে ইচ্ছায় নয়, বাধ্য হয়ে। এটাই এখন একমাত্র খালি জায়গা। কবরস্থানগুলো আশ্রয় হয়ে উঠেছে বেছে নেওয়ার কারণে নয়, বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায়।’

উত্তর গাজার বেইত হানুন শহর থেকে বাস্তুচ্যুত রামি মুসলেহ। ১২ সন্তানের এই বাবা বলেন, ‘কবরস্থান ছাড়া অন্য কোনো জায়গা খুঁজে পাইনি। বাবা-মায়ের জন্য যুদ্ধের মানসিক চাপ ভয়ংকর। তার ওপর সন্তানদের কবরের পাশে বড় করতে হচ্ছে—এটা এক অসহ্য যন্ত্রণা।’

আরেক বাসিন্দা সাবাহ মুহাম্মদ বলেন, ‘যে কবরস্থান একসময় মৃতদের জন্য পবিত্র ছিল, সেগুলো এখন নীরব সাক্ষী হয়ে আছে জীবিতদের দুর্দশার। এখানে নেই পানি, নেই বিদ্যুৎ, নেই গোপনীয়তা—শুধু টিকে থাকার ন্যূনতম ব্যবস্থা।’ তার কথায়, ‘গাজায় এখন মৃতদের জমিই জীবিতদের শেষ আশ্রয়।’

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার অন্তত ১৯ লাখ মানুষ—অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ-যুদ্ধ চলাকালে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার, কেউ কেউ দশবারেরও বেশি স্থানান্তরিত হয়েছেন।

দক্ষিণ গাজার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখন অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা। ইসরায়েল উত্তর গাজা ও গাজা শহরের বাসিন্দাদের জোর করে সরিয়ে দিয়েছে। পরে দক্ষিণমুখী পালানোর সময়ও তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। একটু জমি ভাড়া নেওয়ার মতো সামর্থ্যও এখন অনেকের নেই। স্থায়ী আয়ের উৎস নেই, সীমিত মানবিক সহায়তার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজাজুড়ে প্রায় ৬১ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে; পুরো পাড়া-মহল্লা মুছে গেছে মানচিত্র থেকে। অনেকে সেই ধ্বংসস্তূপেই খুঁজছেন আশ্রয় ও পানির উৎস।

অক্টোবরের ১০ তারিখ থেকে কার্যকর নাজুক যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েল এখনো মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বুধবার রায় দিয়েছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে কারণ অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। সহায়তার কনটেইনারগুলো মূলত গাজার কেন্দ্র ও দক্ষিণাংশে কেরেম শালোম সীমান্তপথে প্রবেশ করছে। উত্তর দিকের কোনো সীমান্ত এখনো খোলা হয়নি।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এমপি প্রার্থীকে ‘আল্লাহর পাঠানো ফেরেশতা’ আখ্যা দিলেন বিএনপি নেতা Dec 09, 2025
img
শেফিল্ড শিল্ড থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন মিচেল মার্শ Dec 09, 2025
img
গ্রামে গ্রামে বল প্রয়োগকারী বাহিনী তৈরি করেছিল হাসিনা: জি কে গউছ Dec 09, 2025
img

গুমের মামলায়

হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে শুনানি আজ Dec 09, 2025
img
ক্যানসার প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে : মেয়র শাহাদাত Dec 09, 2025
img
জেনে নিন দেশের বাজারে আজ প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম Dec 09, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন জেলেনস্কি Dec 09, 2025
img
লয়্যালিটির বিনিময়ে আমি আরও বেশি দিই: স্বস্তিকা দত্ত Dec 09, 2025
img
রাজধানীতে শীতের আমেজ, কমছে তাপমাত্রা Dec 09, 2025
img
এবার স্কোয়াডে জায়গা হলো না মোহাম্মদ সালাহর Dec 09, 2025
img
‘বন্দে মাতারম’ নিয়ে মোদিকে একহাত নিলেন প্রিয়াঙ্কা Dec 09, 2025
img
ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে অশ্রুসিক্ত শামসুর রহমান, পেলেন ‘গার্ড অব অনার’ Dec 09, 2025
img
আজও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় Dec 09, 2025
img
অ্যাডিলেডে ফিরছেন কামিন্স, ছিটকে গেলেন হ্যাজেলউড Dec 09, 2025
img
বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রাজধানী ঢাকা Dec 09, 2025
img
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনালে আজ সাক্ষ্য দেবেন হাসনাত আব্দুল্লাহ Dec 09, 2025
img
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ Dec 09, 2025
img
হামজাকে দলে ভেড়াতে তৎপর বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব Dec 09, 2025
img
বিএনপির শক্তি-সাহস-মনোবল এ দেশের জনগণ: আবু সুফিয়ান Dec 09, 2025
আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে, ৮১ পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদন চূড়ান্ত Dec 09, 2025