নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে প্রাণ ফিরেছে বগালেক ও কেওক্রাডংয়ে

তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ১ অক্টোবর কেওক্রাডং পাহাড় এবং এর পাদদেশের বগালেক আবার পর্যটকদের জন্য খুলে গেছে। রুমা উপজেলার গভীর পাহাড়ে অবস্থিত এক প্রাকৃতিক হ্রদ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা প্রায় ১,২৪৬ ফুট (৩৮০ মিটার)। চারপাশে ঘন বাঁশঝাড়ে ঘেরা এই হ্রদ প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি।

প্রায় ১৮.৫৬ একর আয়তনের এই স্বাদুপানির হ্রদকে কেন্দ্র করে এক সময় গড়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত পর্যটন ব্যবসা। স্থানীয় বম নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ ঘরবাড়ি ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলির কারণে তিন বছর ধরে পর্যটন নিষিদ্ধ থাকায় বগাপাড়ার জীবন থমকে যায়। নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাওয়ায় কাটতে শুরু করেছে স্থবিরতা। নতুন করে হাসি ফুটেছে পাহাড়িদের মুখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিম বমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পড়াশোনা শেষে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে গ্রামে ফিরে তিনি নিজের কটেজ চালু করেছিলেন। তিন বছর বন্ধ থাকার পর সেখানে এখন আবার আলো জ্বলছে। তার মা, বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও, অতিথিদের জন্য প্রতিদিন তিনবেলা রান্না করেন হাসিমুখে।

বগালেকে ফিরেছে পর্যটকের কোলাহল। গিফট শপে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় হস্তশিল্প, বাতাসে পাহাড়ি চায়ের ঘ্রাণ। বগালেক থেকে কেওক্রাডং পর্যন্ত তৈরি হয়েছে নতুন রাস্তা। পথে দেখা মিলবে মেঘে ঢাকা পাহাড়, পাখির ডাক আর বুনো হাওয়ার। কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় গিয়ে থামতে হয়। এরপর আর যেতে দেওয়া হয় না নিরাপত্তার কারণে। এই চূড়ার কাছেই লাল মুন থনের বাড়ি। সবাই তাকে লালা বম নামে চেনে। ১৯৯৩ সালে লালা বমের বাবা বান্দরবান জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কেওক্রাডং পাহাড় ও আশপাশের ৩৫০ একর জমি ১০০ বছরের জন্য ইজারা নেন।

শুরুর দিকে এখানে ছিল একটি গয়ালের খামার। পরে যখন পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে, কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় দুটি কটেজ তৈরি করে পর্যটন ব্যবসা শুরু করেন লালা বম, যা লালা বাবুর রেস্ট হাউজ নামে পরিচিত। এখানেই পর্যটকেরা চা হাতে মেঘের রাজ্য দেখেন, পাহাড়ের নৈঃশব্দ শোনেন। কেওক্রাডংয়ের পূর্বে ১১ কিলোমিটার দূরে ধুপানিছড়া পাড়ায় বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত এক বিন্দুতে মিলেছে, যা পরিচিত ‘ট্রাই পয়েন্ট’ নামে। সেখানে একটি তিনমুখী পিলার রয়েছে। তবে নিরাপত্তার কারণে সেখানে এখন যাওয়া নিষিদ্ধ।

বান্দরবান শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কেওক্রাডং পাহাড়ে যাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম চান্দের গাড়ি। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও অনেকে যান। সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা। কেওক্রাডং এবং বগালেকে বেশ কিছু কটেজ আছে। খুব সস্তায় এসব কটেজে রাত কাটানো যায়। খাওয়া-দাওয়ার দামও নাগালের মধ্যেই। যাওয়ার আগে কটেজ বুকিং দিয়ে যাওয়াই ভালো।

ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তন চেয়ে মশাল মিছিল Dec 12, 2025
img
তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে বরিশালে জামায়াতের মিছিল Dec 12, 2025
থাই–কম্বোডিয়া উত্তেজনা, ট্রাম্প কি আবার শান্তি আনতে পারবেন? Dec 12, 2025
বিক্ষোভের মুখে বুলগেরিয়ার সরকার পতন Dec 12, 2025
ভোটার তালিকা সংশোধনী নিয়ে বিজেপির উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তা মমতা ব্যানার্জির Dec 12, 2025
সাবেক দুই উপদেষ্টার বিচার দাবিতে যা বললেন তৃণমূল এনসিপির নেতা Dec 12, 2025
আফগান সন্ত্রাস নিয়ে কঠোর পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র,ভিন্ন পথে ভারত Dec 12, 2025
img
বিচার চাই, আমি ফুটফুটে একটা সন্তান হারিয়েছি: ছোট্ট সাজিদের বাবা Dec 12, 2025
সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের হুমকি ইসরায়েলি মন্ত্রীর Dec 12, 2025
মিয়ানমারে হাসপাতালে জান্তার বিমান হামলা নিহত ৩১ Dec 12, 2025
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় উদ্বোধন করলেন প্রধান বিচারপতি Dec 12, 2025
১২ ফেব্রুয়ারী সংসদ নির্বাচন ও গণভোট Dec 12, 2025
সব অপেক্ষার পালা শেষ! এবার নির্বাচনের ডামাডোল Dec 12, 2025
ভাইরাল নাচে অক্ষয়ের বাবা বিনোদের ছায়া Dec 12, 2025
বছর চারেকের অপেক্ষা শেষে ‘নূর’ দর্শকের হাতে Dec 12, 2025
বিপিএলে কাঁপায় দিতে হইবো, ক্রিকেট আবেগের জায়গা : পলাশ Dec 12, 2025
img
আজ অনুষ্ঠিত হবে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা Dec 12, 2025
img
পদত্যাগ করলেন ব্রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার Dec 12, 2025
img
আমরা রাজনীতির মাঠে ফুটবল হতে আসিনি, প্লেয়ার হয়ে এসেছি: নুর Dec 12, 2025
img
টাঙ্গাইল-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে কফিন মিছিল Dec 12, 2025