বিএনপির লক্ষ্য গণমুখী বাংলাদেশ গড়া : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি আধুনিক-গণমুখী বাংলাদেশ গড়া, যেখানে কোনো নারীকে তাঁর পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে না হয়। তিনি এমন যে কোনো পশ্চাৎমুখী ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন, যা নারীর সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে। গতকাল সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান এ মন্তব্য করেন।

একই পোস্টে ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা জানান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট- ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। যেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারী গর্বের সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। একটি প্রশ্নোত্তর দিয়ে তারেক রহমান তাঁর এ ফেসবুক পোস্টের লেখা শুরু করে বলেন, যখন কোনো তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দেন, অথবা কোনো ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, তখন কী হয়? বাংলাদেশ হারায় তার সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতি।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য তুলে ধরেন তারেক রহমান।

এতে তিনি বলেন, পুরুষের তুলনায় নারীর শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। মোট পুরুষের ৮০ শতাংশের বিপরীতে মোট নারীর মাত্র ৪৩ শতাংশ কর্মজীবী। এ ব্যবধান আমাদের সতর্ক করছে যে, আমরা আমাদের জাতির অর্ধেকেরও বেশি মেধা ও দক্ষতাকে পেছনে ফেলে যাচ্ছি। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবে, সে-সংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা জানান বিএনপির এই শীর্ষনেতা।

তিনি বলেন, বিএনপি সারা দেশে এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে, যাতে শিশু পরিচর্যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হয়।

তারেক রহমান উল্লিখিত পরিকল্পনায় বলা হয় : সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন। সরকারি অফিসগুলোয় ধাপে ধাপে ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপনের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ। বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে কেয়ার ব্যবস্থা। যেসব নিয়োগকর্তা শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে, তাঁদের জন্য কর সুবিধা ও সিএসআর ক্রেডিট প্রদান এবং নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান অনুযায়ী কেয়ার-গিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রদান।

তারেক রহমান আরও বলেন, এই একটি সংস্কার নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে। পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করতে পারে। ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা দিতে পারে। দেশের জিডিপিতে ১ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করতে পারে। তিনি বলেন, কর্মজীবী মায়েদের অবদান অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। যেহেতু তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী, তাই কর্মজীবী মায়েদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা কোনোক্রমেই উচিত নয়।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গবেষণার তথ্য তারেক রহমান তাঁর পোস্টে তুলে ধরে বলেন, যেসব কারখানায় শিশু পরিচর্যার সুবিধা রয়েছে, সেখানে কর্মী ধরে রাখার হার বেশি, অনুপস্থিতি কম। আর প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরের মধ্যে খরচ তুলে আনতে পারে। তাছাড়া শিশু পরিচর্যা কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়। এটি সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর একটি অপরিহার্য অংশ। সড়ক যেমন বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবনে সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শুধু ন্যায়সংগত নয়; এটিই বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থনীতি।

প্রত্যেক কর্মজীবী মা, প্রত্যেক ছাত্রী নিজ নিজ সাফল্যের স্বাধীনতা পায়- এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ি যেখানে প্রতিটি কর্মজীবী মা ও প্রতিটি ছাত্রী নিজের সাফল্যের স্বাধীনতা পায় এবং যেখানে সমাজের যত্ন ও সহযোগিতাকে অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দলগুলো ঐকমত্যে আসতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: হাসনাত Oct 31, 2025
img
জবি ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের পদত্যাগ, পরে ডিলিট করলেন পোস্ট Oct 31, 2025
img
যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা লুটপাট দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন করেছে : এ্যানি Oct 31, 2025
img
১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ যাচাইয়ে ডিএনসিসির কমিটি গঠন Oct 31, 2025
img
জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত আফগানিস্তানের Oct 31, 2025
img
খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল এক পর্যটকের Oct 31, 2025
img
সিলেটের জালাল আহমেদ ও যীশুসহ ১০ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা-কর্মচারী পেলেন বিশেষ সম্মাননা Oct 31, 2025
img
তেল আবিবের সমুদ্র সৈকতে নেতানিয়াহুর ব্যঙ্গচিত্র Oct 31, 2025
img
প্রিন্স উপাধি হারালেন অ্যান্ড্রু, ছাড়তে হবে রাজকীয় প্রাসাদ Oct 31, 2025
img
শহীদ জিয়ার আদর্শকে ধারণ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে : অ্যাটর্নি জেনারেল Oct 31, 2025
img
শাপলার কলি দ্রতই শাপলা হয়ে ফুটবে : সারোয়ার তুষার Oct 31, 2025
img
ম্যাচ চলাকালীন স্ট্রেচারে মাঠ ছেড়েছে সোহান Oct 31, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং দাপটে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ Oct 31, 2025
img
নিজের সব ছবি-পোস্ট মুছে আলোচনায় পাকিস্তানি অভিনেত্রী Oct 31, 2025
img
ফ্যাসিবাদবিরোধী আসিফ মাহমুদও এখন ফ্যাসিস্ট-লুটপাটকারী : তারেক রহমান Oct 31, 2025
img
নারী বিশ্বকাপের ফাইনালের আম্পায়ারদের নাম প্রকাশ Oct 31, 2025
img
ডিসি-এসপি ভাগাভাগি চলছে: হাসনাত Oct 31, 2025
img
ভূতের লুকে ছেলেকে নিয়ে চমক দিলেন অভিনেত্রী শাবনূর Oct 31, 2025
img
দেশে ক্ষমতা যার হাতে থাকে, তাকেই মানুষ তোয়াজ করে : রনি Oct 31, 2025
img
বিশ্ববাজারে ফের কমল স্বর্ণের দাম Oct 31, 2025