পৃথিবীতে অনেক মানুষ ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ালেও বড় একটি অংশ সিঙ্গেল রয়েছেন। অনেকেই জানেন না, এই সিঙ্গেলদের কাছে একটি দিন উদযাপন করা খুবই কঠিন। আপনার মনে হতে পারে সেটা ভালোবাসা দিবস হতে পারে। কিন্তু আসলে না, সেটি হলো হ্যালোইন।
সম্প্রতি আমেরিকান ডেটিং ডটকম ওয়েবসাইটের এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সেখানে দেখা গেছে, সিঙ্গেলদের হ্যালোইন দিনটিকে বছরের সবচেয়ে একাকী দিন বলে মনে করেন। হ্যালোউইন সাধারণত আনন্দ, সাজগোজ, আড্ডা আর পার্টির উৎসব হলেও সিঙ্গেলদের জন্য এটি যেন নিজের নিঃসঙ্গতার মুখোমুখি হওয়ার দিন। হ্যালোইনের দিনটি তাদের মনে করিয়ে দেয় যে, তারা কতটা একা। যা অনেকের কাছে ভূতের ভয়ের চেয়েও ভয়ংকর।
১,০০০ জন সিঙ্গেল মানুষের ওপর চালানো জরিপে বেশিরভাগই জানিয়েছেন, হ্যালোইন তাদের জন্য ভালোবাসা দিবসের চেয়েও কষ্টদায়ক একটি দিন। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৭ শতাংশ মানুষ বলেন, এই ছুটির দিনটিতে তারা একাকীত্বে বেশি ভোগেন।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, ৭৯ শতাংশ সিঙ্গেল প্রাপ্তবয়স্ক স্বীকার করেছেন যে, হ্যালোইন এলেই তারা একা বোধ করেন। এমনকি অনেকেই পরিবারের সঙ্গে থেকেও একা অনুভব করেছেন। বিশেষ করে উৎসবের ছবি তোলার সময়, যখন পরিবারের অন্য সদস্যরা সঙ্গীর সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরে ছবি তুলেন, তখন তাদের মনে নিজের সঙ্গীর অভাব আরও গভীরভাবে অনুভূত হয়।
জরিপে আরও বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া হ্যালোইনের একাকীত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ৭৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, হ্যালোইনের সাজানো হাসিখুশি পোস্ট ও ছবিগুলো দেখে তারা নিজের শূন্যতাকে প্রকটভাবে অনুভব করেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ জানান, একাকীত্ব কাটাতে তারা বাধ্য হয়ে হ্যালোইনের উদযাপনে যোগ দেন। আবার ৬২ শতাংশ মানুষ বলেন, ছুটির সময় তারা একাকী বোধ করলেও ভালো থাকার মতো আচরণ করেন, এমন কি কাছের মানুষদেরও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন না।
সম্প্রতি ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া একাকীত্বের প্রতিষেধক নয়। বরং এসব প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার যত বাড়ছে, একাকীত্বের অনুভূতিও তত বাড়ছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর আগে আমেরিকানরা যতটা একা অনুভব করতেন, এখন তার চেয়েও বেশি একাকীত্বে ভুগছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ একাকীত্বে ভুগচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এটি ভবিষ্যতে এক ধরনের মানসিক মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই চিকিৎসক ও প্রাক্তন মার্কিন সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি পরামর্শ দিয়েছেন, একাকীত্ব কাটাতে প্রত্যেকেরই সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিদিন ছোট ছোট ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
প্রতি বছরই ৩১ অক্টোবর হ্যালোইন উৎসব পালন করা হয়। তবে ২০২৫ সালের হ্যালোইন হবে একটু বিশেষ। কারণ হলো, এ বছর হ্যালোইন পড়েছে শুক্রবারে, যা একটি বিরল ঘটনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুক্রবারে হ্যালোইন দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২০৩১ সাল পর্যন্ত। আরও মজার ব্যাপার হলো, ২০২৫ সালের এই হ্যালোইন পড়েছে মাসের পঞ্চম শুক্রবারে, যা খুবই অস্বাভাবিক একটি ঘটনা।
এ কারণে অনেকেই এবারের হ্যালোইনকে ‘নো কিংজ র্যালি ২০২৫ হ্যালোইন’ বলা হচ্ছে। অর্থাৎ স্বাধীন মেজাজের হ্যালোইন, যেখানে কোনো সম্পর্ক বা সামাজিক বাঁধা রাখা নেই। ফলে এবারের হ্যালোইন শুধু ভূতের সাজ আর ক্যান্ডির উৎসব নয় বরং সময়ের দিক থেকেও এক বিশেষ ও বিরল উদযাপন হয়ে উঠেছে।
ভয়ের সাজসজ্জার এই উৎসব অনেকের জন্য মজার হলেও, একাকী মানুষের জন্য এটি এক অদৃশ্য ব্যথার দিন। তাই যদি এই হ্যালোইনে আপনি একা থাকেন, নিজেকে দোষ দেবেন না। নিজের যত্ন নিন, পছন্দের কিছু করুন, মন ভালো রাখুন। কারণ হ্যালোইন মানেই শুধু ভূতের ভয় নয়, নিজের সঙ্গে সময় কাটানোরও এক চমৎকার সুযোগ।
এবি/টিকে