পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় তাড়াহুড়ো নয় : ইরান

তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ইরান ‘‘তাড়াহুড়ো করছে না’’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সোমবার কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।

আরাঘচি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি পারস্পরিক স্বার্থ ও সমান মর্যাদার ভিত্তিতে কথা বলতে চায়, তাহলে ইরান পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলকে ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ ‘‘আঞ্চলিক ঐকমত্য’’ গড়ে উঠছে।

তেহরানের শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার সরাসরি বৈঠকের দাবি, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণ শূন্যে নামিয়ে আনা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুতে সীমা আরোপ এবং আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতি তেহরানের সমর্থন বন্ধ করার মতো সব শর্ত একেবারে ‘‘অযৌক্তিক ও অন্যায্য।’’

এর ফলে আলোচনা বর্তমানে ‘‘অগ্রহণযোগ্য’’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আরাঘচি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাড়াহুড়ো করছে না। আমরাও করছি না।

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল ও বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চাপে থাকা সত্ত্বেও আরাঘচি দাবি করেন, বর্তমানে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ক্রমেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মোড় নিচ্ছে।

‘‘আমি মাঝে মাঝে বন্ধুদের বলি, নেতানিয়াহু যুদ্ধাপরাধী। তিনি অগণিত নৃশংস অপরাধ করেছেন। কিন্তু অন্তত একটি ‘ভালো’ কাজ করেছেন। তিনি গোটা অঞ্চলের সবার কাছে এটি প্রমাণ করেছেন, ইসরায়েলই মূল শত্রু; ইরান কিংবা অন্য কোনও দেশও নয়।’’

এই মন্তব্যের দুই দিন আগে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার কট্টর সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। বাহরাইনে অনুষ্ঠিত মানামা ডায়ালগ-২০২৫ এর আঞ্চলিক ফোরামে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর বিন হামাদ আল-বুসাঈদি বলেন, আমরা বহুদিন ধরেই জানি ইরান নয়; বরং ইসরায়েলই এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার প্রধান উৎস।

তিনি বলেন, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) এতদিন ইরানকে বিচ্ছিন্ন হতে দিয়েছে। এই নীতি এখন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ওমান বহু বছর ধরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু, আর্থিক, বন্দি বিনিময়সহ নানা বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছে।

তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ষষ্ঠ দফা পরমাণু আলোচনা গত জুনের মাঝের দিকে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়; যা ১২ দিনব্যাপী যুদ্ধের সূচনা করে। এতে ইরানে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন এবং বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি হয়।

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ওমানের মাধ্যমে তেহরানে নতুন বার্তা পাঠিয়েছে। ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি এই বার্তা পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এর বিষয়বস্তু কিংবা তেহরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু জানাননি তিনি। হোয়াইট হাউসও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি।

সাক্ষাৎকারে আরাগচি বলেছেন, ইরানের হাতে থাকা ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ৪০০ কিলোগ্রামের ‘‘প্রায় সবই’’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমা হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনার নিচে চাপা পড়ে আছে।

‘‘পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সেগুলো উদ্ধার করার কোনও পরিকল্পনা নেই। আমরা জানি না ওই ৪০০ কিলোগ্রামের কতটা অক্ষত আছে, কতটা ধ্বংস হয়েছে; তা কেবল খনন কাজ শুরু হলেই বোঝা যাবে।’’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন ও রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় দেশগুলোর চাপের মুখে জাতিসংঘের পুনর্বহাল করা নিষেধাজ্ঞাকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি তেহরানের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু কোনও বাস্তব অগ্রগতি দেখা যায়নি।

এদিকে এই তিন দেশ ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। গত সেপ্টেম্বর তারা ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি স্থগিত করে; যা ইরান এয়ারের মতো জাতীয় এয়ারলাইন্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তবে ধীরে ধীরে কিছু ফ্লাইট আবার চালু হতে শুরু করেছে। রোববার রাতে তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট অবতরণের দৃশ্য সম্প্রচার করেছে ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

জার্মানির লুফথানসাও তেহরানে ফ্লাইট পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করেছে। যদিও এই বিমান সংস্থাটি এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও তারিখ ঘোষণা করেনি।

সূত্র: আল জাজিরা।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন অচল সরকার, বিমানবন্দরে তীব্র বিশৃঙ্খলা Nov 04, 2025
img
আইনি জটিলতায় ইয়ামি গৌতম ও ইমরান হাশমি Nov 04, 2025
img
শাহজালাল বিমানবন্দরের ই-গেট খুলে দেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Nov 04, 2025
img
‘গরিবের ডাক্তার’ শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দেয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ Nov 04, 2025
img
যারা বাংলাদেশকে চায়নি, তারা কীভাবে দেশের শাসনভার চায়: মির্জা আব্বাস Nov 04, 2025
img
সিনেমায় অভিনয়ের পরিকল্পনা করছি: পারিসা জান্নাত Nov 04, 2025
img
পুলিশ কোনো প্রার্থীকে বিশেষ সুবিধা দিলে ব‍্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Nov 04, 2025
img
এবারও জোটেনি বিএনপির মনোনয়ন, ফেসবুকে বার্তা দিলেন মনির খান Nov 04, 2025
img
মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার শুরু ইলিয়াসপত্নী লুনার Nov 04, 2025
img
যারা মনোনয়ন পায়নি, বিশ্বাস রাখুন, দল আপনাদের সম্মান দেবে: মির্জা ফখরুল Nov 04, 2025
img
কর্মকর্তাকে নিতে ৫ কিলোমিটার উল্টো পথে চলল ট্রেন! Nov 04, 2025
img
আরপিও চূড়ান্তের আগে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা জরুরি ছিল : সাইফুল হক Nov 04, 2025
img
সাবেক এমপি পোটনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটের অনুমোদন দিলো দুদক Nov 04, 2025
img
আন্তর্জাতিক সালিশের দ্বারস্থ বাংলাদেশ ও আদানি গ্রুপ Nov 04, 2025
img
প্রতীক ভাড়া দেয়ার দিন শেষ: সারজিস আলম Nov 04, 2025
img
ফ্লোরাল শাড়িতে সৌন্দর্য আর অনাবিল আভায় সাফা কবির! Nov 04, 2025
img
দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষে কাজ করার আহ্বান আমিনুল হকের Nov 04, 2025
img
মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে রুমিন ফারহানার বার্তা Nov 04, 2025
img
৪ দিন নয়, ২ দিনের সরকারি সফরে পাবনা যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি Nov 04, 2025
img
বাবার আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন দুই কন্যা Nov 04, 2025