বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় ক্যানসার ধরা পড়ে ডা. সামরিনা আলম তানহার। সংসার জীবন বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয় বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
ওই সংগ্রামের সঙ্গী হয়েছেন স্বামী চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহেল রহমান। নিজের ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে স্ত্রীর পাশে থেকে গত আট মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিদেশে যাওয়া বাদ দিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সোহেল রহমান স্ত্রীর পাশে আছেন।
চিকিৎসার জন্য জীবনের সব সঞ্চয় ইতোমধ্যে শেষ করেছেন তিনি। এখন ঋণ করে চিকিৎসা চালাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড উইনিং এ ফিল্ম মেকার।
সোহেল জানান, গত বছর বড় বোনকে হারিয়েছেন তিনি। বোনের চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে তার। এরই মাঝে তার মাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসাবাবদ ২৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেও মাকে বাঁচাতে পারেননি সোহেল। এ মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই স্ত্রীর ক্যানসার নিয়ে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার।
তিনি বলেন, বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় স্ত্রী ডা. সামরিনা আলম তানহার জটিল স্টোমাক ক্যানসার (সিগ্নেট রিংসেল গেস্ট্রিক কারসিনোমা) ধরা পড়ে। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত ৩০ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়ে গেছে।
দেশের চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ ইফোর্ট দেয়ায় ডা. তানহার অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে। চিকিৎসকরা তাকে বাইরে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জার্মানির চেরিতে এক হাসপাতাল, তুরস্কের আনাদুলো মেডিকেল সেন্টার ও অস্ট্রেলিয়ার পিটার ম্যাক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এসব দেশে সফল অপারেশনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা হয়।
সোহেল জানান, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় তার এক ভাইয়ের স্ত্রী অপারেশনের মাধ্যমে ওই ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়েছেন। তাই আশার আলো দেখছেন তিনি। স্ত্রীকে দ্রুত বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
এর মধ্যে দেশের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ডাক্তার ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য ৭০ লাখ টাকারও বেশি খরচ হবে। ওই টাকা বহনের ক্ষমতা এই মুহূর্তে নেই সোহেলের। তাই সমাজের বিবেকবানদের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।
স্ত্রীর পাশে থাকার কথা জানিয়ে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে সোহেল রহমান লিখেছেন, “বিয়ের অল্প ক'দিন পর ছবিটি তোলা। ছাদে উঠে পাখি আর আকাশ দেখছিলাম দু'জনে, সাথে টুকটাক গল্প। স্কারলেট ম্যাকাও পাখির মতো আমরাও পুরোদমে ঠিক করি, পাখি না হলেও বাকি জীবন মানুষ হয়ে পাখির মতো এক সাথে উড়বো, থাকবো।
আমাদের ছাদে উঠে পাখি দেখা হয়নি আর। চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসার জন্য ফ্লাইটে ঢাকা আসার সময় ও বসেছিল জানালার পাশে। মেঘ আর পাখি দেখার কথা থাকলেও আমরা দেখছিলাম আমাদের চোখ, আমাদের সামনে পড়ে থাকা আকাশ সমান চ্যালেঞ্জ। জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে হার জিত যা হবে হোক, লড়াইটা আমরা এক সাথে লড়বো বলে ঠিক করি।”
কেএন/টিএ