স্বাধীনতার পরও দেশকে আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত থাকতে দেওয়া হয়নি : জাহিদুল ইসলাম

বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচারের পর আমাদের কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে স্বাধীনতার পরও পার্শ্ববর্তী একটি রাষ্ট্র তার আধিপত্যবাদী নীতির কারণে আমাদের স্বাধীন থাকতে দেয়নি।

রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে সৃজনশীল ও আকর্ষণীয় নববর্ষ প্রকাশনা সামগ্রী–২০২৬ এর মোড়ক উন্মোচন ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ অন্তর্ভুক্ত করে মূলত ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। শেখ মুজিব জনপ্রিয় ছিলেন ভাষণ দিয়ে, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় সততা, নৈতিকতা ও নেতৃত্বগুণের অভাবে তিনি ব্যর্থ হন। স্বাধীনতার পর বাকশালের মাধ্যমে একদলীয় শাসন কায়েম করে রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে দেশ শাসনের চেষ্টা করেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল জাতির জন্য নির্মম এক অধ্যায়, কিন্তু তার কারণ ও প্রেক্ষাপট এখনো যথাযথভাবে বিশ্লেষণ হয়নি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সে ইতিহাস উদঘাটন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয়। আমাদের এই পথচলা ছিল কঠিন, কিন্তু স্বপ্ন ছিল জুলুম-নির্যাতনমুক্ত সমাজ গড়ার। শহীদ কাসিম আলীসহ বহু নেতা সেই আদর্শে জীবন উৎসর্গ করেছেন।

সংগঠনের শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, শিবিরের ২৩৪ জন ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে শুধুমাত্র সমাজকে ভালো করার চেষ্টার অপরাধে। তবু আমরা থেমে থাকিনি। ২০২৪ সালের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান নতুন সূর্যোদয়ের পথ খুলে দিয়েছে।

প্রকাশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় ৩০০টি প্রকাশনা সামগ্রী আমরা প্রকাশ করেছি, যা ছাত্রসমাজের মেধা ও চিন্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এবার আমাদের ক্যালেন্ডারে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদগুলোকে স্থান দিয়েছি। মসজিদ সমাজ সংস্কার ও রাষ্ট্র নির্মাণের প্রাণকেন্দ্র হতে পারে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই আমরা।

তিনি জানান, এ বছরের তিন পাতা ক্যালেন্ডারের থিম ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’। ডিজিটাল প্রতারণার যুগ পেরিয়ে আমরা চাই প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।

শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ৪০-এর দশক থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্র রাজনীতিতে নতুন দিক উন্মোচন করেছে। কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের কথা বললেই আমাদের দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের প্রথম সভাপতি শহীদ কাসিম আলী এবং দ্বিতীয় সভাপতি কামরুজ্জামানসহ শত শত নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে আমাদের প্রকাশনা উৎসব করা ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। প্রকাশনায় ‘ইসলামী ছাত্রশিবির’ লেখা থাকলেই গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হতে হতো। তারপরও আমরা থেমে থাকিনি, প্রতি বছর নতুন উদ্যমে প্রকাশনা সাজিয়ে ছাত্রসমাজের সামনে হাজির হই।

নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের তিন পাতা ক্যালেন্ডারে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাত তথ্যপ্রযুক্তি, চিকিৎসা, ওষুধ, পোশাক শিল্পসহ ১২টি অগ্রাধিকার খাত তুলে ধরা হয়েছে। তরুণরা যদি প্রযুক্তি ও জ্ঞানচর্চায় মনোযোগ দেয়, তবে বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাবনাময় অর্থনীতি হয়ে উঠবে।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির শহীদের রক্তে লেখা ইতিহাসকে সংরক্ষণ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা শহীদ পরিবারগুলোর কাছে গেছি, তাদের স্মৃতি ও অনুভূতিগুলো সংগ্রহ করেছি। এসব সাক্ষাৎকার ও স্মৃতিকথা সংকলন করে আমরা ‘রক্তের দলিল’ নামে দুই খণ্ডের একটি সারক প্রকাশ করছি।

সাদিক কায়েম আরও বলেন, ৩৬ জুলাই স্মৃতিলিপন প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে তিন হাজারেরও বেশি লেখা আমাদের কাছে জমা পড়ে। সেই লেখাগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে আমরা প্রথম খণ্ড প্রকাশ করছি, যা মূলত ছাত্রজনতার আত্মত্যাগ, শহীদ ও গাজীদের স্মৃতি, তাদের স্বপ্ন ও নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিশু শহীদদের স্মৃতিও সংরক্ষণ করছি, শহীদ তাহমিদ, রিয়া গোপ, শহীদ আনাসসহ অসংখ্য শিশু যারা জুলাই বিপ্লবে জীবন দিয়েছে। তাদের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা ‘গল্পে আঁকা জুলাই’ নামে একটি উপন্যাস প্রকাশ করছি। আমি বিশ্বাস করি, এটি বাংলাদেশের জুলাইকে কেন্দ্র করে লেখা অন্যতম সেরা সাহিত্যকর্ম হতে যাচ্ছে।

এছাড়া তিনি বলেন, একই অনুষ্ঠানে ‘রাষ্ট্র, রাজনীতি ও ইসলাম’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে। এটি ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রকাশনা, অনুবাদ করেছেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন খান ও ওবায়দুল রহমান হাসান।

দুই দিনব্যাপী এই আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের প্রকাশনা ও বই উন্মোচনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং মতবিনিময় পর্ব থাকবে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী ও মুক্তিকামী তরুণরা এসে তাদের মতামত দেবেন।”

নিজেদের আদর্শ তুলে ধরে তিনি বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নতুন ধারার ছাত্র রাজনীতির দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ও ত্যাগের আলোকে যদি তরুণ প্রজন্ম রাজনীতি বিনির্মাণ করে, তাহলে আগামী বাংলাদেশের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে।

ডাকসুর জিএস এবং ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাবি শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ডাকসু ও ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আমরা যত ভালো কাজই করি না কেন, কিছু মানুষ তা নিয়ে বিব্রত হয় এবং অকারণ সমালোচনা করে। তারা শুধু বিরোধিতা করার সুযোগ খোঁজে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান প্রজন্ম এসব বুঝে ফেলেছে আমরা থেমে থাকব না।

ফরহাদ আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাবান জাতি হিসেবে বিশ্বে তুলে ধরা। ইনশাআল্লাহ আমরা সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতারা।

টিজে/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইরাকে কুয়েতের ৯টি বিমানের জরুরি অবতরণ Nov 09, 2025
img
রশিদে কম টাকা দেখিয়ে ধরা পড়া ভূমি কর্মকর্তা পদচ্যুত Nov 09, 2025
img
গাভির শূন্যতা অনুভব করছেন বার্সেলোনা কোচ হান্সি Nov 09, 2025
img
আর্জেন্টিনার ৭-০ গোলের জয় Nov 09, 2025
img
রহস্যময় মন্তব্যে বিতর্কে জড়ালেন অপরাজিতা Nov 09, 2025
img
অস্থির সময়ে শান্ত থাকার পরামর্শ দিলেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায় Nov 09, 2025
img
জাহানারার অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন বিসিবি সভাপতি Nov 09, 2025
img
সব পদ থেকে বিএনপির ৫ নেতা বহিষ্কার Nov 09, 2025
img
এবার ওটিটিতে দেখা যাবে জয়া-আবীরের সিনেমা Nov 09, 2025
img
অনশন ভেঙে ডাবের পানি খেলেন তারেক Nov 09, 2025
img
কিউবার অন্তর্ভুক্তি দলের শক্তি বাড়িয়েছে, মনে করেন তপু Nov 09, 2025
img

মোস্তফা ফিরোজ

সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে কারো মন পেলেন না ড. মুহাম্মদ ইউনূস Nov 09, 2025
রাজশাহীর ফুটপাত উচ্ছেদে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ Nov 09, 2025
img
‘কফি উইথ করণ’-এ বিরাট কোহলির না থাকার কারণ জানালেন করণ জোহর Nov 09, 2025
img
বদলে গেল আয়ুশ্মান-শর্বরীর সিনেমার নাম Nov 09, 2025
img
‘রাউডি রাঠোরের’ সিক্যুয়েল আসছে ১২ বছর পর Nov 09, 2025
img
জোহরান মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি তুলছে ট্রাম্পের দল Nov 09, 2025
img
জলবায়ু সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পেয়ে হতাশ আফগান সরকার Nov 09, 2025
img
ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লার মধ্যে আপনাদের বেছে নিতে হবে: মির্জা ফখরুল Nov 09, 2025
img
চাঁদপুরে নদীর পাঙাশ প্রতি কেজি ৯০০ টাকা Nov 09, 2025