অনেকেই ভাবেন যে, গাছের ডাল কাটলে বা পাতা ছিঁড়লে গাছ কোনো ব্যথা অনুভব করে না। কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে- গাছও ব্যথা পায় আর আমাদের মতোই আর্তনাদ করে অন্যদেরকে জানান দেয়।
সম্প্রতি তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি দল আবিষ্কার করেছেন যে, কিছু গাছপালা যখন পরিবেশগত চাপের মধ্যে থাকে তখন তারা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির (আল্ট্রাসনিক) শব্দ নির্গত করে।
গবেষকরা টমেটো ও তামাক জাতীয় উদ্ভিদের উপর এ বিষয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। এ সময় গাছগুলিকে দীর্ঘদিন পানিহীন অবস্থায় রেখে দেন। পরে এসব গাছের ডালগুলি কেটে দশ সেন্টিমিটার দূরে রাখা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করা হয়।
উভয় ক্ষেত্রেই গবেষকেরা দেখতে পান যে, উদ্ভিদগুলি ২০ থেকে ১০০ কিলোহার্টজ মাত্রার আল্ট্রাসনিক শব্দ নির্গত করতে শুরু করেছে। গবেষকদের মতে, এই শব্দের মাধ্যমে গাছ তাদের উদ্বেগ আশেপাশের অন্যান্য গাছপালা ও জীব-জন্তুর কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
লাইভ সায়েন্স-এর তথ্য অনুসারে, যখন একটি টমেটো গাছের কাণ্ড কাটা হয়েছিল, গবেষকরা দেখতে পেলেন যে এটি এক ঘণ্টা ধরে ২৫টি আল্ট্রাসনিক শব্দ নির্গত করেছে। অন্যদিকে তামাক গাছের কাণ্ড কাটলে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ১৫টি আল্ট্রাসনিক শব্দ বেরিয়েছিল।
গবেষকরা যখন গাছগুলি পানিহীন অবস্থার মধ্যে রাখেন, তখন টমেটো গাছ থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে ৩৬টিরও বেশি উদ্বেগজনক আল্ট্রাসনিক শব্দ নির্গত হয়েছিল, আর তামাক গাছ ১১টি করে শব্দ করেছিল। ফলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিভিন্ন প্রকার চাপের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন তীব্রতার সঙ্গে উদ্ভিদ সাড়া দেয়।
দলটি আরও পর্যবেক্ষণ করেছে যে, তামাক গাছ তাদের ডাল কাটার চেয়ে জল থেকে বঞ্চিত হলে বেশি জোরে শব্দ করে। তাছাড়া যেসব উদ্ভিদের তাৎক্ষণিক পরিবেশগত হুমকি বা সংকট ছিল না, তারা প্রতি ঘণ্টায় একটির চেয়ে কম আল্ট্রাসনিক শব্দ নির্গত করেছে।
এতদিন অবধি উদ্ভিদকে প্রায় নীরব বলে বিবেচনা করা হয়েছে, কিন্তু এই গবেষণার ফলে উদ্ভিদ জগত সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও অন্যান্য পরিস্থিতিতে উদ্ভিদ বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ করে বায়ু বা তীব্র বৃষ্টির হতে পারে এমন পূর্বাভাস দেয় বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। দলটির বিশ্বাস, উদ্ভিদের দ্বারা নির্গত বিভিন্ন ধরণের শব্দ বিশ্লেষণ কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
উল্লেখ্য যে গতবছর অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে- কিছু গাছের পাতা ছিঁড়লে বা হালকা স্পর্শ কলেই ‘ব্যথা’ হিসেবে সেটা রেকর্ড করেছে এবং প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গাছের পাতায় একটি বিশেষ রাসায়নিকের নিঃসরণ ঘটিয়েছে। তথ্যসূত্র: ডেইলিমেইল অনলাইন
টাইমস/এনজে/জিএস