নিজের স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস ধরে রাখতে চান সবাই, কিন্তু পেটের নাছোড়বান্দা মেদ কমানো যেন এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিম করা, কঠোর ডায়েট মেনে চলা, কিংবা দামী স্বাস্থ্য পণ্য ব্যবহার করেও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফল মেলে না। এর কারণ হলো, ওজন কমানোর জন্য কেবল ক্যালরি কমানোই যথেষ্ট নয়; সুস্থ বিপাক (মেটাবলিজম) এবং সঠিক হজমের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
আর এখানেই কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে আপনার রান্নাঘরের অতি পরিচিত উপাদান আদা। চায়ের স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে এটি শরীরের জন্য এক প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে।
পুষ্টিবিদদের মতে, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে আদা যোগ করলে এটি আপনার ওজন কমানোর যাত্রায় একটি 'গেম চেঞ্জার' হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণা এবং পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, আদা নিম্নলিখিত উপায়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে:
বিপাক বৃদ্ধি ও ফ্যাট বার্ন: আদার মধ্যে থাকা 'জিঞ্জেরল' (Gingerol) এবং 'শোগাওল' (Shogaol) নামক যৌগগুলো শরীরে থার্মোজেনেসিস প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। এই প্রক্রিয়া শরীরকে দ্রুত ক্যালরি ও চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে মেদ জমার সম্ভাবনা কমে আসে।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ: আদার প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ক্ষুধা দমনকারী (Appetite Suppressant) হিসেবে কাজ করে। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয় এবং ঘন ঘন খাবারের আকাঙ্ক্ষা কমায়। ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যায় এবং ওজন হ্রাস সহজ হয়।
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করলে চর্বি ঝরানো কঠিন হয়ে পড়ে। আদা ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে, যা চিনিকে সহজে প্রক্রিয়াজাত করতে সাহায্য করে। এর ফলে অতিরিক্ত গ্লুকোজ চর্বি হিসেবে জমা হতে বাধা পায়। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করা: আদা একটি চমৎকার প্রাকৃতিক হজম সহায়ক। এটি পাকস্থলীর এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা কমায়। পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকলে শরীরে চর্বি জমা হয় না, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্য ওয়েবসাইট মেডিকেল নিউজ টুডে-এর তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে ২৭টি গবেষণার এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে আদা খাওয়া ওজন কমাতে কার্যকর হতে পারে। যদিও গবেষকরা আরও গভীর গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করেন, প্রাথমিক ফলাফলগুলো খুবই আশাব্যঞ্জক।
ওজন কমানোর জন্য আদার পুরো উপকারিতা পেতে হলে এটি সঠিকভাবে গ্রহণ করা উচিত:
আদা জল (Ginger Water): আদা গ্রহণের সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায় হলো আদা জল পান করা।
এক টুকরো আদা দুই কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন।
পানি অর্ধেক হয়ে এলে ছেঁকে নিন এবং খালি পেটে পান করুন।
এর স্বাদ ও ডিটক্সিফাইং প্রভাব বাড়ানোর জন্য সামান্য লেবুর রস ও মধু যোগ করা যেতে পারে।
অন্যান্য ব্যবহার: আপনি গ্রিন টি, স্যুপ বা সকালের স্মুদিতেও আদা যোগ করতে পারেন।
সতর্কতা: বেশি পরিমাণে আদা গ্রহণ করলে এসিডিটি বা বুকজ্বালার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই পুষ্টিবিদরা দিনে দুইবারের বেশি আদা পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
ওজন কমানো ছাড়াও আদার আরও অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আদার রস সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়, শরীরের প্রদাহ ও ব্যথা কমায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে।
এমকে/এসএন