সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার গণহত্যার মামলার রায় ঘোষণা প্রক্রিয়া ১৩ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে ১৩, ১৪ ও ১৫ নভেম্বর দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর সে কারণেই সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরো তিন মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এই সমস্ত পদক্ষেপকে ঘিরে বিভিন্ন আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা চলছে।’
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-তে মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিও সরকারকে চাপ তৈরি করছে। তবে সরকার বিএনপি-জামায়াতের এসব কর্মসূচিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।
কারণ সরকারের ধারণা, বিএনপি বা জামায়াতের কর্মসূচি সরকারকে বিপদে ফেলবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার সর্বোচ্চ শক্তি দেখানোর চেষ্টা করবে। দেশে বিদেশে এটাকে ইস্যু করার চেষ্টা করবে। এর বিপরীতে সরকারের জন্যও এটি এক ধরনের শক্তি পরীক্ষা।
আওয়ামী লীগ যেমন নিজেদের সংগঠনগত ক্ষমতা প্রদর্শন করবে, তেমনি সরকারেরও পরীক্ষা হবে—তারা কতটা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে। সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক মাঠে শুরু হতে যাচ্ছে এক ধরনের ‘শক্তি প্রদর্শনের খেলা’।”
তিনি আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যে গতকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এক ধরনের আতঙ্ক ছড়াতে সক্ষম হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। রাজধানীসহ সারা দেশে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কি শেষ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপে যেতে পারবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ভেতরে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ঢুকে পড়েছে বলে গুজব ও আশঙ্কা ছড়াচ্ছে।’
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপড়েন, বিশেষ করে বিএনপির প্রার্থিতা ইস্যু এবং অভ্যন্তরীণ সংকট—সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে সরাসরি মোকাবেলা করা এখন আর কোনো দলের প্রধান লক্ষ্য নয়। ফলে সমস্ত দায়িত্ব এখন কার্যত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর পড়েছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরও কিছু দুর্বলতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য ট্রেনিং শেষে বিশ্রামে ফেরার কথা ছিল তাদের সেই ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এর পরও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাটছে না।’
তিনি আরো বলেন, “আগামী এক-দুই দিনের মধ্যেই বড় ধরনের কোনো ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ ঘটানো হতে পারে। যা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন সরকারের প্রতি বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সক্ষমতার প্রতি আস্থা তেমন নেই। দেশজুড়ে এখন এক ধরনের অপেক্ষা, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তার আবহে মানুষ দিন পার করছে। যেখানে আশা ও ভরসার জায়গাটা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।’
ইএ/এসএন