বাংলায় আধুনিক প্রবন্ধের জনক রাজা রামমোহন রায়

ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি দার্শনিক রামমোহন রায়। তিনি ১৭৭২ সালের ২২ মে হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও কুলীন হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। একেশ্বরবাদ বা ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা রামমোহন রায়কে দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর ‘রাজা’ উপাধি দেন।

তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় ও শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য। তখন হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হত।

রাজা রামমোহন রায় বাংলা ভাষায় আধুনিক প্রবন্ধ সাহিত্যিক সূচনা করেছিলেন। তিনি প্রায় ৩০টি বাংলা গ্রন্থের রচয়িতা। তার রচিত ‘ব্রহ্মসঙ্গীত’, ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ উল্লেখযোগ্য। তার আগে এমন কিছু চেষ্টা হলেও তিনিই প্রথম সার্থক প্রবন্ধের স্রষ্টা। এজন্য তাকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়।

রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মধর্মের ধর্মীয় মতামত ও সামাজিক আদর্শ প্রচারের জন্য তিনি গতানুগতিক পয়ার চিত্রপদীর বদলে গদ্যের ব্যবহার করতেন। তার গদ্যরীতি অনুসরণ করে শ্রীরামপুরের মিশনারিরা বাইবেলের অনুবাদ ও বিদ্যালয়ের পাঠ্য বাংলা বই ছাপকে শুরু করে। ১৮১৮ সালে ‘প্রবর্তক ও নিবর্তনের স্বাদ’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করলেন। সেটিই বাংলা গদ্যের বিকাশ ভূমিকা রেখেছিলো। তার কাজকে এগিয়ে নিলেন একদিকে মৃত্যুঞ্জয় তার সংস্কৃত ভাষানুগ বাংলা গদ্য, অন্যদিকে রামরাম বসু তার মুন্সীয়ানা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে।

১৮১৮ সালেই শ্রীরামপুরের মিশনারিরা প্রকাশ করলো ‘সমাচার দর্পণ’। এ সংবাদপত্রের মাধ্যমে বাংলা গদ্য কথ্য ভাষার কাছাকাছি এক সহজতর রূপ নিলো। এরপর দ্রুতই গদ্যধারায় প্রকাশিত হতে থাকে বহু সংবাদপত্র। এদের মধ্যে তত্ত্বোবোধিনী, সংবাদ প্রভাকর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

আর তত্ত্বোবোধিনীই গদ্য সাহিত্যিকদের স্রষ্টা। এ পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয় কুমার দত্ত এবং লেখকদের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ, রাজ নারায়ণ বসু গদ্য সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তত্ত্বোবোধিনীকে অবলম্বন করে বাংলা মননশীল গদ্য সাহিত্যের সৃষ্টি হয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিশ্ববাজারে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম Sep 16, 2025
img
দুই জয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে শ্রীলঙ্কা, খালি হাতে বিদায় নিল হংকং Sep 16, 2025
img
ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধি করল এনবিআর Sep 16, 2025
img
ইভ্যালি থেকে বেরিয়ে একই কৌশলে প্রতারণা, নারী গ্রেপ্তার Sep 16, 2025
img
এশিয়া কাপ জিতেনি বাংলাদেশ গুগোল করে নিশ্চিত হলেন ট্রট Sep 16, 2025
img
ড. ইউনূস ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনষ্ট হবে : রাশেদ খান Sep 16, 2025
img
ডাকসুর ভোট ম্যানুয়ালি গণনার জন্য উমামার লিখিত আবেদন Sep 16, 2025
img

মাসুদ সাঈদী

জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন, তাহলে নির্বাচন বর্জনের দরকার হবে না Sep 16, 2025
img
আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ Sep 16, 2025
img
আগস্টে ৪৯ মামলায় জড়িত ৩১১ দুর্নীতিবাজ Sep 15, 2025
img
১৫ কেজির কোরাল মাছ বিক্রি ১৮ হাজারে Sep 15, 2025
img
শ্রীলঙ্কার সামনে হংকংয়ের ১৫০ রানের চ্যালেঞ্জ Sep 15, 2025
img
নিকুঞ্জে নাগরিক জাগরণ: হারানো শান্তি ফিরে পাওয়ার গল্প Sep 15, 2025
img
সুপার ফোরে খেলবে বাংলাদেশ, আত্মবিশ্বাসী কোচ Sep 15, 2025
img
ম্যাচের আগে বাংলাদেশের প্রশংসায় জনাথন ট্রট Sep 15, 2025
img
অসুস্থ অমিতাভকে ২০০ জন ৬০ ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলেন Sep 15, 2025
img
অতিরিক্ত ৬ বছরের কারাভোগ শেষে ভারতে ফিরলেন রামাতা Sep 15, 2025
এশিয়া কাপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, সুপার ফোর নিশ্চিত কার? Sep 15, 2025
img
আলোচনা ভেস্তে দিতেই দোহায় হামলা : কাতারি আমির Sep 15, 2025
img
তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহী চীন, পাঠাচ্ছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল Sep 15, 2025