'অতিরিক্ত ঘুম' স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়

দুপুর বা রাতের অতিরিক্ত ঘুম বাড়িয়ে দিতে পারে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা। সম্প্রতি চীনের হুয়াজং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত একটি গবেষণা এমন তথ্য জানাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক ব্যক্তিরা যারা রাত্রে নয় ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমায় এবং দিনের বেলা লম্বা সময় ধরে দুপুরে ঘুমিয়ে থাকেন, তাদের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। যারা ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমান; তাদের তুলনায় বেশি বা কম ঘুমানো লোকদের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা ৮৫ শতাংশ বেশি বলে জানা গেছে।

চীনের হুয়াজং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গড়ে ৬২ বছর বয়সী ৩১ হাজার ৭৫০ জন ব্যক্তির উপর পর্যবেক্ষণটি পরিচালনা করেছেন। অংশগ্রহণকারীদেরকে ছয় বছর ধরে অনুসরণ করা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন যে, গবেষণার শুরুতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্ট্রোক বা অন্য কোনো বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার ইতিহাস ছিলনা। তবে গবেষণার সময়ে তারা ১ হাজার ৫৫৭ টি স্ট্রোকের ঘটনা লক্ষ্য করেছেন। অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের রাতের ঘুম, দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস এবং বিশ্রামের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত এই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, আট শতাংশ অংশগ্রহণকারীর গড়ে প্রতিদিন ৯০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস ছিল এবং ২৪ শতাংশ বলেছেন যে তারা প্রতি রাতে নয় ঘণ্টা বা তার থেকেও বেশি সময় ঘুমিয়েছিলেন।

সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে যে, যারা প্রতি রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টার মতো ঘুমায় তাদের তুলনায় যারা প্রতি রাতে নয় ঘণ্টা বা তার থেকেও বেশি ঘুমান তাদের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা ২৩ শতাংশ বেশি।

গবেষকদের মতে, যেসব লোক প্রতি রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমায় অথবা রাত্রে ৭ থেকে নয় ঘণ্টার মতো ঘুমায়, তাদের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা প্রায় একই রকম।

সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ধূমপানের মতো ঘটনাগুলি স্ট্রোকের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এসব কারণ বিবেচনা করেই গবেষণার ফলাফল সামঞ্জস্য করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে যে, যারা রাতে বা দুপুরে দীর্ঘ সময় ঘুমান তাদের তুলনায়, যারা এই দুই সময়ে পরিমিত ঘুমান তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ কম।

গবেষণায় আরও জানা গেছে, যাদের ঘুম গভীর বা ভালো হয় তাদের তুলনায় যাদের ঘুম ঠিকমত হয় না তাদের পরবর্তীকালে স্ট্রোক করার আশঙ্কা ২৩ শতাংশ বেড়ে যায়।

এই গবেষণাটির সহ-লেখক জিয়াওম জাং বলেন, “এই ফলাফল দুপুরে বা রাতে ঘুমানোর পরিমিত সময়কাল এবং ঘুমের গুণগত মান বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে। বিশেষত মধ্য বয়স্ক লোকদের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ"

ঝাংয়ের মতে, এই গবেষণা দুপুর ও রাতে দীর্ঘ সময় ঘুমালেই স্ট্রোক হয় এমন কিছু প্রমাণ করে না। বরং এতে করে স্ট্রোকের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘুমানোর যে সম্পর্ক রয়েছে সেটি বোঝা যায়।

গবেষকরা বলেছেন যে, অধ্যয়নটির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। কারণ দুপুর ও রাতের ঘুম সংক্রান্ত তথ্যগুলো সরাসরি ঘুম রেকর্ড করে সংগ্রহ করা হয়নি। অংশগ্রহণকারীদের দেয়া উত্তর থেকে তথ্যগুলি নেয়া হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণায় যেহেতু শুধু স্বাস্থ্যবান চীনা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেছেন তাই এর ফলাফল অন্য জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তথ্য সূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: