আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছেন পুলিশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চলছে ১৩তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ। এ মামলায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ আসামি রয়েছেন ৩০ জন।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এদিন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছেন পুলিশের নায়েক আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ঘটনার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিচ্ছেন।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মঈনুল করিম, সাইমুম রেজা তালুকদার, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

বুধবার (১২ নভেম্বর) এ মামলায় সাক্ষ্য দেন এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম। রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন এসি মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশে চালানো গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবী ও উপস্থিত ছয় আসামির আইনজীবীরা।

এর আগে, ১১ নভেম্বর ১৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ। তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদেরও একজন ছিলেন। ১০ নভেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান। ১২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে হত্যাকাণ্ডের পুরো বর্ণনা দেন তিনি। এ মামলায় যথাক্রমে ৪ নভেম্বর, ২১ ও ১৩ অক্টোবর সাক্ষী না আনতে পারায় পরপর তিনবার সময় পেছানো হয়।

গত ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন জবানবন্দি দেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক। তারা হলেন- এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল। ২৯ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনের মতো সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন জবানবন্দি দেন তিনজন। ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে প্রথমে ছয় নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সিয়াম আহসান আয়ানকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন আয়ান। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনিই আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিতে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন।

গত ২৮ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। একই দিন সাংবাদিক মঈনুল হকও সাক্ষ্য দেন। এ মামলার গ্রেপ্তার ছয় আসামি হলেন- এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ। তাদের উপস্থিতিতেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন সাক্ষীরা।

গত ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এ মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে গত ২২ জুলাই সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।

গত ৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবী। এর মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন আইনজীবী সুজাত মিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। এছাড়া শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলাম। ২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে শুনানি হয়। এর মধ্যে শরিফুলের হয়ে লড়েন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো। কনস্টেবল সুজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ও ইমরানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগ্যান।

২৮ জুলাই এ মামলার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ৩০ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। আর ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৬২ জন।

আইকে/এসএন



Share this news on:

সর্বশেষ

img
এটাই এনসিপির রাজনীতি, এতদিন নাটক করেছে : মাসুদ কামাল Dec 29, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপের সঙ্গে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ আছে ইরান : পেজেশকিয়ান Dec 29, 2025
img
ফ্যাশন ও ফিটনেসের নতুন চেহারায় জাহ্নবীর আবির্ভাব Dec 29, 2025
img
সড়ক ও ভবনের নির্মাণকাজে ঘুষ-অনিয়ম, তিন জেলায় দুদকের অভিযান Dec 29, 2025
img
কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে ১৪ ভারতীয়কে পুশব্যাক Dec 29, 2025
img
ভাগ্যশ্রী বোরসে ২০২৬-এ ‘লেনিন’ নিয়ে শক্তিশালী কমব্যাকের প্রস্তুতিতে Dec 29, 2025
img
এনসিপির কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন কুমিল্লা-৭ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী Dec 29, 2025
img
'শ্রদ্ধা কাপুরের ফি আলিয়ার চেয়ে বেশি' Dec 29, 2025
img
কুমিল্লা-৪ আসনে হাসনাতকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ালেন জামায়াতের প্রার্থী Dec 29, 2025
img
ঘন কুয়াশায় বরিশালের সঙ্গে সারা দেশের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা Dec 29, 2025
img
নাহিদের জন্য আসন ছাড়লেন জামায়াত প্রার্থী আতিকুর Dec 29, 2025
img
নারী ক্রিকেটে দ্রুততম ১০ হাজার রানের রেকর্ড গড়লেন মান্ধানা Dec 29, 2025
img
এক দিনে প্রায় ৩ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করলেন তাসনিম জারা Dec 29, 2025
img
অহেতুক সমালোচনায় কান না দেওয়ার পরামর্শ শতাব্দী রায়ের Dec 29, 2025
img
এয়ারপোর্টে মাদক সহ বিমানযাত্রী আটক Dec 29, 2025
img
দিনাজপুরে আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার Dec 29, 2025
img
৩৯ কেন্দ্রের ১৭৮টি বুথে হবে জকসুর ভোটগ্রহণ Dec 29, 2025
img
সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা Dec 29, 2025
img
মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে এসে গুলি, প্রাণ গেল যুবদল নেতার Dec 29, 2025
img
খালেদা জিয়া এখনো সংকটময় পরিস্থিতিতে Dec 29, 2025