বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথা সাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন আজ। কোটি পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত এই জাদুকরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রিয় আবাস গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মোমবাতি প্রজ্বালন, কেক কাটা ও কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী তাকে স্মরণ করছেন ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘদিন ধরে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশ পল্লীতে বিশেষ আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, জন্মদিন উদযাপন শুরু হয় রাত ১২টা ১ মিনিটে পল্লীজুড়ে মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে। এক হাজার সাতাত্তরটি মোমবাতি জ্বালানো হয় এবং স্যারের ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে তার সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন কেক কাটেন।
সকালে লেখকের সমাধিস্থলে কেক কাটা ও কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা চলছে। এসব আয়োজনে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছেলে নিশাত, নিনিতসহ নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং লেখকের অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী উপস্থিত রয়েছেন।
১৯৪৮ সালের এই দিনে বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে, তার নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলায় তার ডাকনাম ছিল কাজল। তার বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন একজন লেখক ও পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ১৯৭১ সালে শহীদ হন।
বাবার বদলিজনিত কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার শিক্ষাজীবন কেটেছে। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর গবেষণার মাধ্যমে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতাও করেছেন।
হুমায়ূন আহমেদ তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ (১৯৭২) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠক মহলে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেন। এরপর একে একে সৃষ্টি করেন অজস্র জনপ্রিয় উপন্যাস, গল্প, নাটক ও চলচ্চিত্র। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে—শঙ্খনীল কারাগার, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, বাদশা নামদার এবং মাতাল হাওয়া। তার সৃষ্ট কালজয়ী চরিত্র, হিমু, মিসির আলি, রূপা ও শুভ্র আজও বাংলা সাহিত্যে জীবন্ত।
টেলিভিশন নাটকেও তার অবদান অনস্বীকার্য। এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার এবং নক্ষত্রের রাত-এর মতো জনপ্রিয় নাটকগুলো তারই সৃষ্টি।
চলচ্চিত্র নির্মাণেও তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। তার নির্মিত আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া ও ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রগুলো শিল্পসমৃদ্ধ এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল। এর মধ্যে ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই কথাসাহিত্যিক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই সাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন। তাকে তার প্রিয় আবাস নুহাশ পল্লীর লিচুতলায় সমাহিত করা হয়।
আরপি/এসএন