একইদিনে গণভোট-জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি ৮ দলের

একইদিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক আট দল। তারা অভিযোগ করেছে, জুলাই সনদের কার্যকারিতার জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অপরিহার্য হলেও একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন।

তবে দেরিতে হলেও জুলাই সনদের প্রজ্ঞাপন জারি করায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দলগুলো।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এবং একইদিনে গণভোটও হবে।

প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণার পর রাতে বৈঠকে বসে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক আট দল। তারা জানিয়েছে, এ বিষয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় আট দলের পক্ষ থেকে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

বৈঠক শেষে আট দলের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, “আজ আমরা দুইটা বৈঠক করেছি। জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ঢাকায় অবস্থানরত যারা আছেন তাদের নিয়ে আমরা বসেছিলাম। এরপরই পাঁচটি দাবিতে আমরা যারা আন্দোলনরত আছি আটটি দলে প্রতিনিধি নিয়ে আমরা আবার মিটিং করলাম। দিনের বেলায়ও বিভিন্নভাবে আমাদের নেতৃবৃন্দ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।”

“আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা ভাষণের মাধ্যমে এখনকার যে নির্বাচনের এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে যে কিছুটা 'বন্ধাত্ব তৈরি' হয়ে আছে, জট লেগে আছে সেটার একটা সুষ্ঠ সমাধান হবে এবং পুরো জাতি একটা স্বস্তি পাবে। কিন্তু ভাষণটি বিশ্লেষণ করলে জাতি স্বস্তি এবং মুক্তির যে প্রত্যাশা করেছিল সেটা পূরণ হয়েছে এটা বলা যায় না। ভাষণের কিছু বিষয় আছে যেটি আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। আবার কিছু বিষয় আছে, যেটির কারণে কিছু যে ভালো দিক আছে সেটাও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং এক কথায় যদি আমরা এটাকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ ধরি, এ প্যাকেজটি খুব ফলপ্রশু কোনো সুখকর ভবিষ্যৎ দেবে বা স্বস্তি আনবে এটা আমরা মনে করছি না।”

তাহের বলেন, “আপনারা জানেন দীর্ঘ সময় ধরে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী ছিলাম যে আমরা একটা সুষ্ঠ সংস্কার পাব এবং তার ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন হবে। কিন্তু (বিএনপির) একেকজন একেক ধরনের কথা বললেন, কেউ বললেন সংস্কার কমিশন প্রতারণা করেছে, কেউ বলেন যে আমরা জুলাই সনদ চাই; তবে গণভোট একসাথে চাই, আবার তাদের নেতারা বলেন সংস্কারের কোনো প্রয়োজনই নেই। আবার কেউ কেউ বলেন বিএনপির ৩১ দফাই সবচেয়ে বড় দফা। আবার কেউ বলে যে সংস্কারের বাপ হচ্ছে বিএনপি।”

“এ ধরণের নানামুখী কথার ভেতরে সংস্কার ইস্যুটা মানুষের কাছে এক ধরনের অস্পষ্ট বিষয় রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা সরাসরি বলে আসছি সংস্কারের সাথে নির্বাচন এর সম্পর্ক আছে। এ কারণেই যে কতিপয় সংস্কারের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি যেগুলা আইনি ভিত্তি পাওয়ার পরে আগামী নির্বাচনের একটি ইস্যু হবে।”

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়েছিলাম। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু দল আমরা সংসদের দুই কক্ষে পিআর চেয়েছিলাম। আমাদের দলের ভেতরে অনেকে আবার শুধু উচ্চকক্ষে পিআর চেয়েছে। পুরো জাতি উচ্চকক্ষে পিআর চেয়েছে। শুধু বিএনপি এটার বিরোধীতা করেছে। যদি পিআর পাস হয় তো তাহলে তো এটার ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে। আর যদি এটা পাস না হয় তাহলে এটা মাইনাস করে নির্বাচন হবে। সে কারণে আমরা সবসময় বলেছিলাম যে গণভোটে আগে এসব বিষয় নির্ধারণ হয়ে যাওয়া দরকার।।”

“এতে জানা যেত কোনটা কোনটা জনগণ গ্রহণ করেছে কোনটা জনগণ গ্রহণ করে নাই। জনগণ যদি কিছুই গ্রহণ না করে তাহলে আগের মত নির্বাচন হবে। আর জনগণ যদি কিছু কিছু গ্রহণ করে পুরাটা গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। সেজন্যই গণভোটটা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্পষ্ট হতে হবে যে জনগণ কিসের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।”
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ঠুনকো যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে, এক সাথে দুই নির্বাচন করলে কিছুটা সাশ্রয় হবে। হ্যাঁ সাশ্রয় কিছু হবে। কিন্তু জাতির প্রয়োজনে রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই তো বাজেট খরচ হয়। সে হিসাবে যেটা সাশ্রয় হবে এটি উপকারের চেয়ে অত্যন্ত নগণ্য। আর জাতীয় নির্বাচনের সাথে যদি গণভোট হয় তাহলে গণভোটে যেগুলো মানুষ সমর্থন জানাবে সেগুলো বাস্তবায়নের তো জটিলতা তৈরি হবে। আমি এক জায়গায় বলেছিলাম যে কনসিভ করার আগে সন্তানের নাম রাখা এটা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ না।”

জুলাই সনদ জারি করায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জামায়াতের এ নেতা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ জারি করেছেন এটা আমি মনে করি উনি সঠিক করেছেন। এটা আরও আগে করা দরকার ছিল। জমা দেওয়ার সাথে সাথে করলে সময়ক্ষেপণ কম হতো।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হারিম ও অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ ফজলে বারী মাসুদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের তোফাজ্জল হোসাইন ও মাওলানা জহিরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমাদ আলী কাশেমী ও মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন এবং যুগ্ম মহাসচিব আবদুল জলিল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার ও অর্থ সচিব আনোয়ারুল কবির, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র (জাগপা) ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক নাঈম।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পাকিস্তানি উপস্থাপিকার প্রশ্নে বিস্মিত পলাশ Dec 29, 2025
img
১৩ হাজারের বেশি বিদেশিকে ফেরত পাঠালো সৌদি আরব Dec 29, 2025
img
নিউজিল্যান্ড সফরে বিশ্রামে বুমরাহ ও হার্দিক Dec 29, 2025
img
ফরিদপুর-১ আসনে ধানের শীষ না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন বিএনপি নেতা ঝুনু Dec 29, 2025
img
বিয়ে ভাঙ্গার কষ্ট ভুলে মাঠে ইতিহাস রচনা স্মৃতির Dec 29, 2025
img
নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় দুদক, টাস্কফোর্স কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত Dec 29, 2025
img
আতালান্তাকে হারিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠলো ইন্টার মিলান Dec 29, 2025
img
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পিকআপ উল্টে আহত ৯ Dec 29, 2025
img
চোটে ছিটকে গেলেন ইংল্যান্ডের আরেক পেসার Dec 29, 2025
img
আওয়ামী লীগের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হচ্ছে: জিএম কাদের Dec 29, 2025
img
মেক্সিকোতে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১৩ জনের Dec 29, 2025
img
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আজও সাক্ষ্য দেবেন তদন্ত কর্মকর্তা Dec 29, 2025
img
ঢাকায় মাঝারি কুয়াশাসহ ঠান্ডা অব্যাহত থাকার আভাস Dec 29, 2025
img
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’: ট্রাম্প Dec 29, 2025
img
হাদির আসনে প্রার্থী দিতে রাকসু জিএস সালাউদ্দিন আম্মারের আকুতি Dec 29, 2025
img
অক্ষয় খান্নাকে ঘিরে গুরুতর অভিযোগ Dec 29, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ১ Dec 29, 2025
img
প্রকৃত শিল্পী কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করে না : মোশাররফ করিম Dec 29, 2025
img
আজ থেকে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড দামে বিক্রি হবে স্বর্ণ Dec 29, 2025
img
দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, ১০ম অবস্থানে ঢাকা Dec 29, 2025